

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রিয়দেশ: বাংলাদেশে সিসা দূষণের ভয়াবহতা এখন আর অজানা নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (IHME)–এর তথ্য বলছে, দেশের প্রায় ৩ কোটি ৫৪ লাখ শিশু সিসার বিষক্রিয়ায় কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত বা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এই তথ্য আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন জানা যায়—শিশুদের রক্তে গড়ে ৫.২৬ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার মাত্রার সিসা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে নিরাপদ মাত্রা একেবারেই শূন্য। শুধু শিশু নয়, প্রাপ্তবয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে হাড় ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির জটিল রোগে।
- গবেষণা বলছে:
গ্রীষ্মকালে ১৫% শিশু ও শ্রমিক হিটস্ট্রোক বা হিট এক্সহসশনের শিকার হয়।
সিসার সংস্পর্শে IQ কমে যায়, শিশুর মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিসা দূষণ ২৭% কমলেও এখনো আশঙ্কাজনক স্তরে।
- সিসা আসে কোথা থেকে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা, প্লাস্টিক, সোল্ডার, রং, সিরামিক পণ্য, রাস্তাঘাটের ধুলা, পুরনো পাইপ ও প্রসাধনী—এসবের মধ্য দিয়ে সিসা মানবদেহে প্রবেশ করে। ঢাকার মত নগরগুলোতে এর উৎস আরও বিস্তৃত—খাবার, মাটি, পানি এমনকি বাতাসেও মিলছে সিসার উপস্থিতি।
প্রখ্যাত গবেষক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে অবাধে পরিচালিত ব্যাটারি কারখানাগুলোর গ্যাস ও বর্জ্যই প্রধান সিসা দূষণের উৎস। এসব কারখানার ৯০ শতাংশই অবৈধ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।”
- শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা
সিসা শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, রক্তস্বল্পতা তৈরি করে এবং তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেয়। এটি জন্মের আগেই গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, শারীরিক বৃদ্ধি ও শিক্ষাগত সক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি একটি নীরব দুর্যোগ।”
- কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই না থামালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপন্ন হবে। তাঁদের সুপারিশ—
ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানাগুলোর কঠোর লাইসেন্সিং ও তদারকি
খেলনার রঙ, কসমেটিকস ও কিচেনওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণ।
শিশুদের জন্য রক্তে সিসা পরীক্ষার উদ্যোগ
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ‘সিসা সচেতনতা’ যুক্ত করা।
গণমাধ্যম ও বিদ্যালয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
- গবেষণার পেছনে কারা ছিল?
এই গবেষণা আয়োজন করেছে এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান ফর বাংলাদেশ (EHAP-BD), যার সঙ্গে কাজ করেছে ঢাকার তাপমাত্রা, বায়ুদূষণ ও শিল্পবর্জ্য বিষয়ে কাজ করা একাধিক সংস্থা ও গবেষক। সহযোগিতায় ছিল ইউএনডিপি, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞেরা।