মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড অ্যালার্ট নোটিশ চেয়ে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে— রেড নোটিশ জারি হলে ভারত কি হাসিনাকে ফেরত হবে?
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রেড অ্যালার্ট নোটিশ দিলেই ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরতের সিদ্ধান্ত নেবে— এমন কিছু ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ঢাকাকে এই কথাই মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কূটনীতিকেরা— বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ভারতের সঙ্গে বাস্তবোচিত সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। নয়াদিল্লির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর নীতি নিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সুরাহা হবে না।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ জমানার এই ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে এই সরকারকে।
আপাতত বিদ্যুৎ বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বকেয়া ৮৪.৬ কোটি ডলার পরিশোধ না করায় চলতি মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৭.৩ কোটি ডলারের একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট জারি করেছে। অর্থাৎ, বকেয়ার কিছু অংশ মেটাতে পেরেছে। এখনও অনেকটাই বাকি।
গত কয়েক বছরে ভারত প্রায় ৮০০ কোটি ডলার নামমাত্র সুদে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া, অনুদান দিয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেল, সেচ, নৌ বন্দরের মতো ক্ষেত্র। ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারত-নির্ভরতা যথেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশিদের।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি অয়েল ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড যৌথ মঞ্চ তৈরি করে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় তেল নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা নিয়েছে। এই মুহূর্তে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পাইপলাইনে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাই স্পিড ডিজেল পরিবহণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, শেখ হাসিনা নয়, এই ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামলানো এখন খুবই জরুরি। বাংলাদেশ আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়লে তা ভারতসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
দিল্লির মতে, এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং ভারতের সহায়তা নিয়েই অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করা লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউনূস সরকারের।
এর আগে, গত অক্টোবরে শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের গ্রেফতার করে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ফরমালি আমাদের পক্ষ থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু চলে গেছে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরে।
গত মাসেই ভারত সরকার নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে শেখ হাসিনা তাদের দেশেই অবস্থান করছে। যদিও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকেই।