প্যারালাইসিস, জ্বীন ভুতের আছর, স্বামীর সংসার জোড়া লাগানো, মনের মানুষকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা, বাচ্চা না হওয়া নারীদের বাচ্চা হওয়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার কথা বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন রেজাউল করিম (৪৫) নামের এক কবিরাজ।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহারুল ইসলাম তাকে আটকের পর এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কামরুজ্জামান, জেলা এনএসআই পাবনার সহকারী পরিচালক, থানা পুলিশসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
দণ্ডপ্রাপ্ত ভুয়া কবিরাজ রেজাউল করিম আটঘরিয়া পৌরসভার ধলেশ্বর মহল্লার মৃত আবু বক্কার হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, কবিরাজ রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে অসহায় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নানারকম অপচিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। পাবনা জেলার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ধলেশ্বর মহল্লার রেজাউলের বাড়ির আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করেন ম্যাজিস্ট্রেট নাহারুল ইসলাম।
এসময় তার আস্তানা থেকে ৫টি মাথার খুলি, তজবি, হিন্দু ধর্মের বই, ত্রিশূল, একটি লোহার বড় চেন, শঙ্খ, সিঁদুর, স্বামীর সংসার জোড়া লাগানো একটি মেয়ের ছবিসহ আরও বিভিন্ন গাছগাছালির ছাল জব্দ করা হয়। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সালের ৪১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে রেজাউলকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, রেজাউল করিম গত চার-পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে বলে আসছিলেন আমার কাছে হিন্দু জ্বীন আছে, আমার মেয়ের কাছে মুসলমান জ্বীনও আছে। এসব জ্বীন সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা, ভারতের কামরুপ কামাখ্যা প্রদেশ থেকে আসে। প্যারালাইসিস, জ্বীন ভুতের আছর, স্বামীর সংসার জোড়া লাগানো, ভাঙ্গা প্রেমে জোড়া লাগানো, মনের মানুষকে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় বলে দাবি করতেন তিনি। এছাড়া যৌনমিলনে অক্ষম, বিবাহিত মেয়েদের বাচ্চা দানে অক্ষমদের বাচ্চা হওয়ার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করার কথা বলে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন ধোঁকা দিয়ে আসছিলেন। তিনি চিকিৎসা বাবদ মজুরি হিসেবে নগদ অর্থ, মুরগি, পাঠা ছাগল নিতেন।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহারুল ইসলাম বলেন, ’ভুয়া কবিরাজকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষদের ধোঁকা দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি। এসব অপকর্মের আরো কোনো সন্ধান পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।