

এম এ আশরাফ, নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভোলা শহরের উত্তর চরনোয়াবাদের নিজ বাড়িতে মাওলানা আমিনুল হক নোমানী নামের এক মাদরাসা শিক্ষক ও মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাত ১০টায় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আমিনুল হক ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার শিক্ষক, সদর উপজেলা পরিষদ মসজিদের খতিব ও ইসলামী বক্তা ছিলেন। তার পিতার নাম মাওলানা এনামুল হক।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম চরনোয়াবাদ জামে মসজিদ থেকে এশার নামাজ শেষ করে মো. আমিনুল হক নোমানী তার বাড়িতে যান। এ সময় তার স্ত্রী ও এক মেয়ে, দুই ছেলে সন্তান বাড়িতে ছিলেন না। তারা বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা তার নিজ ঘরে ঢুকে কুপিয়ে জখম করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
এ সময় আমিনুলের ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশী এক নারী এসে বাড়ির সামনের গেট বন্ধ পান এবং এলাকাবাসীকে ডাকেন। কিন্তু বাড়ির প্রধান গেট ভিতর থেকে আটকানো থাকায় স্থানীয়রা টিনের বেড়া ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে রক্তাক্ত আমিনুলকে উদ্ধার করে ভোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মাথা, গলা, ঘাড়, বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম ছিল।
আমিনুল হকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন ইসলামিক দলের নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী হাসপাতালে জড়ো হন। বিচার দাবিতে তাৎক্ষণিকভাবে ভোলা সদর রোডে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। আলেম-ওলামারা হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সদর রোডের কে. জাহান মার্কেটের সামনে সমাবেশ করেন। এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী অপরাধীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে একই দিনে ভোলা সদরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় রাত ১২ টায় জহির নামে আরেকজনকে কুপিয়ে জখম করেছে দূর্বৃত্তরা। আশঙ্কা জনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে একই দিনে জেলার তজুমউদ্দিন থানাধীন ২নং সোনাপুর ইউনিয়ন এর নগর পাটুয়ারীচর মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় কিছু সংখ্যক জেলে ভাসমান গলিত অজ্ঞাতনামা একজন পুরুষ মানুষের লাশ (যার বয়স আনুমানিক ৪৫) দেখতে পেয়ে হাকিমুদ্দীন মির্জা কালু নৌ পুলিশ ফাড়িকে অবগত করলে নৌ পুলিশ অজ্ঞাত লাশটি বিকাল ৫ টার দিকে উদ্ধার করে। হাকিমুদ্দীন মির্জা কালু নৌ পুলিশ ফাড়ি জানিয়েছে অজ্ঞাত লাশটি তজুমউদ্দিন থানায় পাঠানো হয়েছে। লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে তজুমউদ্দিন থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা চলমান।

উল্লেখ্য, ৩১ আগষ্ট (শনিবার) রাতে জেলা শহরের কালিবাড়ী রোড এলাকার নববী মসজিদ সংলগ্ন নিজ বাড়ির সামনে সাইফুল্লাহ আরিফ (৩০) নামে এক ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি প্রশাসন।

এদিকে জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে প্রেমের সম্পর্কের জেরে নারীর চুল কেটে গলায় জোতার মালা পড়িয়ে প্রকাশ্য হেনস্তা করে স্থানীয় মোড়ল। এসব বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে তোলপাড়।
ভোলার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ লিখেন, ভোলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম বিপর্যয়! প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন ও ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা! আল্লাহ তায়ালা এসব কারণেই বোধহয় আমাদেরকে জালিম শাসক দ্বারা শায়েস্তা করেছেন। ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিনতি আমাদের জন্য অপেক্ষমান।
সাংবাদিক আল-আমীন শাহরিয়ার লিখেন, রাতের ভোলা দূর্বৃত্তের দখলে, চলছে খুন আর রক্তের হোলীখেলা..!
সাংবাদিক ইয়ামিন লিখেন, চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ভোলার প্রশাসন। নোমানী হত্যার রক্ত না শুকাতেই জহির নামের একজন কে কুপিয়ে জখম করেছে। আরিফ হ’ত্যার রহস্য উদঘাটন হলে হইতো আজ এ পরিনতি হতো না। জোরালো প্রতিবাদ না হলে প্রশাসন কাজ করে না, এটা আবারো প্রমাণ হচ্ছে। সন্ধ্যায় নোমানী রাতে মুমূর্ষু অবস্থায় আছে জহির, কাল কে হয় জানিনা। সময় থাকতে প্রতিবাদ করুন, প্রশাসন কেন জানি চুপ!
এবিষয় জানার জন্য ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক’কে একাধিক ফোন দিলে তিনি কেটে দেন। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


