
ভারতীয় ট্রলারে সয়লাব ভোলা জেলার লালমোহন ও চরফ্যাশনের নৌপথ। এসব ট্রলারে অবৈধভাবে মাছ ধরার পাশাপাশি গুপ্তচরবৃত্তি হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। এজন্য এসব ট্রলার দ্রুত জব্দ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ভারতীয় ট্রলারের বিষয়টি সামনে আসে কোস্ট গার্ড কর্তৃক দু’টি বোট আটক করার পর। এতে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য এবং মদ পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তবে লালমোহনে মাছ ধরার দুটি অবৈধ ট্রলিং বোট আটক নিয়ে নাটকও কম হয়নি। বোট আটক নিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস, জেলা মৎস্য অফিস ও উপজেলা বিএনপির নেতারা উপস্থাপন করেছেন রোমাঞ্চকর নাটক। এসব বোট ছাড়িয়ে নিতে লেনদেন হয়েছিল লাখ লাখ টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব কোন কাজে আসেনি।
গেল ৬ এপ্রিল সকালে উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া লঞ্চ ঘাট থেকে ভারতীয় দুটি অবৈধ ট্রলিং বোট আটক করে কোস্ট গার্ড। বোট আটক করে প্রকৃত মালিকানার কাগজপত্র দেখাতে না পারায় নাজিরপুর লঞ্চ ঘাটের পশ্চিম পাশে নদীর কিনারে নোঙর করে রাখে কোস্ট গার্ড লালমোহন জোন। এরমধ্যে উপজেলা বিএনপি নেতাদের সাথে বোট ছাড়িয়ে নেয়ার বিষয়ে কয়েক দফা দরকষাকষির কথা বার্তাও হয়েছে।
কোস্ট গার্ডের বোট আটক নিয়ে স্থানীয়রা জানান, বোটে ভারতীয় শাড়ি ও মদ পাওয়া গেছে তাই কোস্ট গার্ড বোট জব্দ করে নিয়ে গেছে।
বোট আটকের বিষয়ে কোস্ট গার্ড লালমোহন জোনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা রাহাত বলেন, আমরা ২টি ট্রলিং বোট আটক করেছি। তারা বোটের মালিকানার কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি তাই বোট দুটি জব্দ করা হয়েছে।
কোস্ট গার্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা বোট দুটি ভোলা সদর দপ্তরে নিয়ে যাবো আর কিছু জানতে চাইলে আপনারা জেলায় কথা বলেন। বোটে অবৈধ মালামাল পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না অবৈধ কিছু আমরা পাইনি তবে বোটের প্রকৃত মালিক নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমেদ আখন্দ বলেন, বোট আটকের কথা রাত একটায় কোস্ট গার্ড আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, তারা বলেন সকালেই নাকি বোট ভোলা নিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, বোট আটকের কথা কোস্ট গার্ড আমাকে জানায়নি।
কোস্ট গার্ডের জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, আমরা দুটি অবৈধ ট্রলিং বোট আটক করেছি। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আপনাদের প্রেস রিলিজ দিবো।
কিন্তু বোট আটকের সপ্তাহ পার হলেও গণমাধ্যমে কিছুই জানায়নি কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন (ভোলা)।
অভিযোগ আছে, ভারত থেকে ফিটনেস বিহীন এসব অবৈধ ট্রলিং বোট একটি চক্রের মাধ্যমে সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসেন ভোলার লালমোহন, চরফ্যাশন, বাউফলের কালাইয়া, লক্ষ্মীপুর ও কলাপাড়ার কিছু চক্র। অবৈধ এ বোটগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় চলাচলের অনুপযোগী। এসব বোট থেকে ভারতীয়রা বাংলাদেশে গুপ্তচরবৃত্তিও করে থাকে। চক্রটি বোটগুলো এনে প্রথমে রঙ পরিবর্তন করে এরপর খুলনা নৌ বাণিজ্য দপ্তরের একটি চক্রের মাধ্যমে বোটের নাম দিয়ে রুট পারমিট ও পায়রা বন্দরের নাম দিয়ে ইন্সফেকশন সার্টিফিকেট এবং হাইকোর্টে রিট পিটিশন দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি খসড়া তৈরি করে এসব অবৈধ বোটের মালিকানা দাবি করে।
উপজেলার গজারিয়া খালগোড়া ইউসুফ ব্রিকসের কাছে খালের মধ্যে সারিবদ্ধ ভাবে ১২টির ওপরে এসব অবৈধ ট্রলিং বোট দেখতে পাওয়া গেছে। এছাড়াও চরফ্যাশনে বকসি ঘাট, কালাইয়া ঘাটেও এসব বোট দেখা যায়। সেখানে ভারতীয় এসব বোটের মালিকদের নিয়ে একটি বোট মালিক সমিতিও গঠন করেছেন তারা। জহির উদ্দিন (সমিতির সভাপতি), ফজলু মাতাব্বর(সমিতির সাধারণ সম্পাদক), মাস্টু মাঝি, শাহে আলম, জসিম, কালু মাতাব্বর, পংকজ মাঝি, ফজলু কোম্পানি, কালাম কোম্পানি, ফারুক চৌকিদার, আব্বাস, মিজান ডাক্তার, খোকন, ইউসুফ, কবির, মাসুদ কোম্পানি,নবী মাঝি সহ আরও অনেকেই এসব বোটের মালিক। এদের কারো ১, কারো ২ এবং কারো ৩/৪ টি বোট রয়েছে। এক একটি বোটের দাম কোটি টাকার ওপরে, চক্রটি ৭০/৮০ লক্ষ টাকায় এক একটি বোট বাংলাদেশে বিক্রি করে।
জব্দ বোটের মালিকানা দাবি করা ফারুক চৌকিদার বলেন, আমরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। ভারতীয় শাড়ির বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনটি ভারতীয় চাদর ছিলো। পরবর্তীতে তিনি বোটের মালিকানা অস্বীকার করেছেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলু মাতাব্বর বলেন, বোটের মালিকানার কাগজপত্রে গড়মিল আছে, সেজন্যই হয়তো বোট দিচ্ছে না। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা ট্রলার চক্রের সাথে জড়িত কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি ১০ মিনিট পরে কল করবেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর তাকে কল দেওয়া হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।