পূজামন্ডপের অর্থ লোপাটের অভিযোগ

পটুয়াখালীর বাউফলে পূজামন্ডপের সরকারী বরাদ্ধের টাকা অত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ। ৪টি মন্ডপে কোন ধরনের পুজা হয়নি। রয়েছে ৮টি ঘটপূজার নামে অর্থ অত্মসাতের অভিযোগ।



জানাগেছে, হিন্দু ধর্মাাবলস্বিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাউফলের ৬৫টি মন্ডপের জন্য ৫শত কেজি করে মোট সাড়ে ৩২টন চাল বরাদ্ধ দেয় সরকার। ৬৫টি পূজা মন্ডপের তালিকা প্রনয়ণ করেন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি। কোন ধরনের যাচাই বাছাই না করে প্রতিটি মন্ডপের জন্য সমান বরাদ্ধ অনুমোদন দেন উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কিন্তু ওই মন্ডপের মধ্যে ৪টি মন্ডপে কোন ধরনের পূজা উদযাপন করা হয়নি। বেনামে সরকারী বরাদ্ধের টাকা অত্মসাতের জন্য ওই মন্ডপের নাম দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে যথানিয়মে।
সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোসিংগা মিস্ত্রি বাড়ির পূজা মন্ডপে বিচিত্র সরকার নামের এক ব্যক্তিকে সভাপতি দেখানো হয়েছে। তালিকায় অথচ ওই ব্যক্তি মারা গেছেন ৩বছর আগে। আদাবাড়িয় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মাধবপুরা অটল হাওলাদার বাড়ি দূর্গা মন্ডপ চলতি বছরসহ মোট তিন বছর যাবৎ পূজা হয় না। অথচ ওই বরাদ্ধের তালিকায় নাম রয়েছে। কালিশুরী ইউনিয়নের সিংরাকাঠি মিলন মন্দির এবং সিংরাকাঠি ব্যপারীবাড়ি নামে দুটি মন্দিরের নামে বরাদ্ধ নেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ওই দুটি মন্দির একই বাড়িতে অবস্থিত। তালিকায় দেখানো সভাপতি সজল হাওলাদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপর সভাপতির মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বরাদ্ধের চাল নিতে প্রতিটি পূজা মন্ডপের কমিটিকে গুনতে হয়েছে ১-৩হাজার টাকা পর্যন্ত। এই টাকা সবই দিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে।
এছারাও বাউফলে ৯টি মন্ডপে ঘটপূজার নামে একই ভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় আচার অনুসারে ৩টি মাটির ঘট (পাত্র), দুটি কলা গাছ, আম সরাত (পাতা), বেলপাতা, দুর্বা (ঘাস), তুলসিপাতা, ফলপ্রসাদ ও একটি ব্যানারের সমন্বয়ে ঘট পূজায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে একজন ব্রাহ্মণ মন্ত্রপাঠ করান। ব্রাহ্মন মুকিন্দ লালের তথ্যমতে সর্বসাকুল্যে এই পূজায় খরচ ৩হাজার টাকা। এর বিপরিতের বরাদ্ধের পরিমাণ ৫শত কেজি চাল। যার বাজার মূল্য ২১-২২হাজার টাকা। সাংবাদিদের অনুসন্ধানে মাত্র ২টি ঘটপূজার সন্ধান পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে দক্ষিণ গোসিংগা মিস্ত্রিবাড়ি পূজা মন্ডপের বিচিত্র সরকার পুত্রবধু কল্পনা রানী বলেন, গত ৩বছর আগে তার চাচা শশুর বিচিত্র সরকার মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২বছর পূজা উৎসব পালিত হয় না এই মন্দিরে। পূজার অনুদান পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মৃত ব্যক্তি কিভাবে অনুদান নিবেন।
মাধবপুর অটল হাওলাদার বাড়ি পূজা মন্ডপের যুদিষ্টি হাওলাদার বলেন, গত ৩বছর তাদের বাড়িতে পূজা হয় না। সরকারী বরাদ্ধের চাল সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা।
সিংহেরাকাঠি ব্যাপারী বাড়ি দূর্গা মন্ডপ ও বাহেরচর সিংহেরাকাঠি মিলন মন্দির একই বাড়ির নিশ্চিত করে বিনোদ হাওলাদার বলেন, এ মন্দিরে এবছর পূজা উদযাপন করা হয় না।
পূজা উদযাপন কমিটির বাউফল উপজেলা সভাপতি বাবু সঞ্জিত কুমার ওরফে সনু সাহা বলেন, ৫৭টি প্রতিমা ও ৮টি ঘটপূজাসহ মোট ৬৫টি মন্ডপের জন্য বরাদ্ধ পেয়েছি। ১-৩হাজার টাকা নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ব্যানার এবং মাষ্টার রোলের খরচ বাবদ ওই টাকা নেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী বলেন, বাউফলে মোট ৬৫টি পূজা মন্ডপের জন্য ৫‘শত কেজি করে চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।