দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সহ্য হচ্ছেনা বিএনপির : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যারা বিএনপি দল গঠন করেছিলেন, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২ বছর ও একাধারে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদসহ ২২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা তাদের পক্ষে এখন আর সহ্য হচ্ছেনা।এমনকি তারা সরকারের কোন উন্নয়ন অগ্রগতিও সহ্য করতে পারছে না। সেই কারণে তারা এখন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সংসদে ৭লাখ ৮৯হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা হয়েছে। গত ১৫বছরে বাজেটের অংক সাড়ে ১১গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার বৃদ্ধি পাওয়া মানে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে। দেশের বাজেটের আকার যখন বৃদ্ধি পায় তখন বুঝতে হবে দেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। বিএনপি জামাত বাজেট ঘোষণার আগেই বিবৃতি রেডি করে রাখে। গত ১৫বছরের তাদের বিবৃতি-বক্তব্য যদি দেখেন তখন হুবহু মিল খুঁজে পাবেন।

শনিবার (৭জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাঙালির মুক্তি সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস স্মরণে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পূর্ব বাংলার মানুষের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষে মনন তৈরী করার জন্যই বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। ছয় দফার পক্ষে মানুষ ব্যাপক সাড়া দেন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়ান, যেখানেই বক্তব্য দেন সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হতো। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি পাবার পর আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার প্রস্তাব দেন বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তিনি বলেন, ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানের পর ছয় দফার উপর ভিত্তি করেই দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। জনগণ ছয় দফার পক্ষেই ভোট দেয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বিলিতে মেজরিটি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে যখন বাহানা করা হচ্ছিল তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ছয়দফা যখন ঘোষণা করেছিলাম তখন এটি আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ মুজিবের দফা ছিল, নির্বাচনের পর এটি জনগণের দফায় পরিণত হয়েছে। জণগণই ছয় দফার পক্ষে রায় দিয়েছে। আমি ছয় দফার বাইরে কোন আপোস করতে পারব না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি আপোস করতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে তিনি স্বাধীনতার লক্ষ্যেই এগিয়ে যান। ১৯৪৭সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর একবছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে সক্ষম হন পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালির মুক্তি নাই। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বক্তব্যে তিনি পক্ষান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্বের ২৭টি দেশকে পেছনে ফেলে বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩৩তম অর্থনীতির দেশ, ১৫বছর আগে ছিল পৃথিবীর ৬০তম অর্থনীতির দেশ। এই ২৭ দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরও আছে। জিডিপির আকারে আমরা তাদেরকেও অতিক্রম করেছি। শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্ব ও চিন্তা এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণেই এগুলো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনরা জানেন ২০১৪ ও ১৮ সালে সঙ্কট তৈরী করা হয়েছে। ২০২৪সালেও সঙ্কট তৈরির অপচেষ্ঠা ছিল। কিন্তু সমস্ত সঙ্কট ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে আওয়ামী লীগ আজকে পরপর চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণে তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেচে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের চোখ কান সবসময় খাড়া রাখতে হবে।
দেশে বুদ্ধিজীবি কয়েক প্রকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা হচ্ছে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে বিশেষ কারণে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, আরেকটা হচ্ছে সব বিষয়ে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। কেউ পড়েছেন আইন তিনি অর্থনীতি কিংবা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, কেউ পড়েছেন অর্থনীতি উনি আবার তেল গ্যাসের বিশেষজ্ঞ। এই কদিন দেখবেন এই বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে টেলিভিশনের পর্দা গরম হয়ে যাচ্ছে। তারা এবং বিএনপি-জামাত বলতে শুরু করেছে এই বাজেট জনগণের কোন কল্যাণে আসবে না।

ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি-জামাত ও কতিপয় বুদ্ধিজীবিদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাজেট জনগণের কল্যাণে যদি না আসে, তাহলে গত ১৫ বছরে দারিদ্রতা ৪০শতাংশ থেকে নেমে ১৮.৭ শতাংশে কেমনে আসল ? আর অতিদারিদ্রতা ২২শতাংশ ছিল, সেখান থেকে ৫.৭শতাংশে কিভাবে নেমে এসেছে ? এটি সম্ভব হয়েছে বাজেট বাস্তবায়নের কারণেই। এরা আসলে চোখ থাকতেও অন্ধ কান থাকতেও বধির। ওদের চোখ এবং কান যেন মহান আল্লাহ ঠিক করে দেন সেই প্রার্থনা করি।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ এবং কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ।