জুলাই দলিল নিয়ে গড়িমসি: ৫ আগস্টের মধ্যে সনদ প্রকাশের হুঁশিয়ারি নাহিদের

নিজস্ব,প্রতিবেদক|প্রিয়দেশ: জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর একটি “জাতীয় দলিল” হিসেবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা সম্বলিত ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের দাবি জোরালো হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক পোস্টে সরকারের প্রতি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে তারা নিজস্ব উদ্যোগেই এই দলিলগুলো প্রকাশ করবেন।

নাহিদ ইসলাম তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, গত ৩১শে ডিসেম্বর ছাত্রনেতৃত্ব জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সরকারিভাবে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের আগ্রহ দেখালে ছাত্রনেতৃত্ব তাদের উদ্যোগ থেকে সরে আসে। এরপর সরকার বিভিন্ন দল ও পক্ষের কাছ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র আহ্বান করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও সরকারের কাছে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল, সবগুলো ডকুমেন্ট মিলিয়ে একটি সমন্বিত দলিল তৈরি করা হবে যা সকল পক্ষ একসাথে উদযাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করবে।


তবে, সরকারের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “কিন্তু সরকার দুই দুইবার সময় দিয়েও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। কেন করেনি, কোথায় বাধা পেলো তাও স্পষ্ট করে নি।” তিনি সরকারের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই ঘোষণাপত্র জারি করা হোক, যা পরবর্তীতে সংবিধানে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকার যদি কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে তারা বসে থাকবেন না। তিনি বলেছেন, “আমাদের বক্তব্য, আমাদের ইশতেহার অবশ্যই আমরা প্রকাশ করবো। অন্য সকল পক্ষকেও বলবো আপনাদের ইশতেহার তৈরি করুন। সকলে মিলে আমরা দলিল তৈরি করতে পারলে সরকার সেটা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।” তিনি আরও জানান যে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেই পাঠ করা হবে।

জুলাই সনদের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই সনদে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা থাকবে এবং সংবিধানের কোন কোন অংশে পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল হবে, যেখানে সকল দল স্বাক্ষর করবে। যদিও এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি (গণভোট, গণপরিষদ অথবা সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে) এখনো ঠিক হয়নি। তাঁর মতে, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বাধ্য থাকবে।

নাহিদ ইসলাম জোর দিয়ে বলেছেন যে, জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ উভয়ই দেওয়া সম্ভব। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, “কোনো একটি পক্ষ যদি দলীয় স্বার্থে ঐক্যমত প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাহলে সরকারে উচিত ভয় না করে অন্য সকল পক্ষ ও সাধারণ জনগনকে সাথে নিয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।” তিনি আরও যোগ করেন, “জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র দিতে না পারলে সরকারের এখতিয়ার থাকবে না জুলাই উদযাপনে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার।”

পোস্টের শেষে নাহিদ ইসলাম দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে চাই ৫ই অগাস্ট তথা ৩৬শে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ রচিত হোক। সকল পক্ষ সকল ধরনের ছাড় দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করুক।” একই সাথে তিনি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এবং জনগণকে এতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই পদযাত্রার মাধ্যমে তারা পথে প্রান্তরে জনগণের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।