শাহজালালের পূণ্যভূমি সিলেটে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যে অচলাবস্থা ছিল, সেই পরিস্থিতি নিরসনে শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হয়ে আসলেন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং শাবিপ্রবি’র সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
এসময় তিনি বেশকিছু কথা বলেছেন, যেখান থেকে ভিসি এবং অন্যান্য শিক্ষকরাও শিক্ষা নিতে পারেন। তিনি বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের ওপর যখন পুলিশের হামলা হয়েছে, তখন শিক্ষকদের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ছিল। বলা উচিত ছিল, খবরদার, তোমরা এগুলো করতে পারবে না আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। একজন শিক্ষকও তা করেননি। যে উপায়ে এই আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এই যে তারা (আন্দোলনরত শিক্ষার্থী) কী পরিমাণ কষ্ট করেছে, সেটা আমি নিজের চোখে দেখা না পর্যন্ত বুঝতে পারি না। তারা যেন খেতে না পারে, খাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের নিষ্ঠুরতা আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে করা হবে, সেটা চিন্তার বাইরে। আমি আশা করব, সরকার যেন বিষয়টা বিবেচনা করে দেখে।
তিনি বলেন, আমি আসলে এসেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। আমি খুব ইমোশনাল, আমার চোখে পানি চলে আসে। ওরা (সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী) টাকা-পয়সা দেওয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তোমাদেরকে সাহায্য করতে যদি অ্যারেস্ট হতে হয় তাহলে আমি হব। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থে আমার কাছে একটা লেখা চেয়েছিল। সেই লেখাটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে দশ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছে। আমি এই সম্মানীর টাকাটা নিয়ে আসছি, এই আন্দোলনের ফান্ডে এই টাকাটা দিচ্ছি, তোমরা রাখো। এবার পারলে আমাকে অ্যারেস্ট করুক। সাবেক শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে সহায়তা করায় অ্যারেস্ট হলে আমাকেও অ্যারেস্ট করুক। আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কিনা।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাহস করে এসব কথা বলেছেন। এ কথাগুলো আসলে কথার নয়। এগুলোই বাস্তব কথা। শিক্ষার্থীরাও সাবেক এই শিক্ষকের কথায় সম্মান দিয়ে নিজেদের অনশন ভেঙেছে। এই সম্মান ও শ্রদ্ধা এমনিতেই আসে না। অর্জন করে নিতে হয়। মুহম্মদ জাফর ইকবাল সেটা অর্জন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হয়েও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। তবে বর্তমান ভিসি এবং শিক্ষকরা তা পারেননি। আমরা আশা করি, ভিসি ও বর্তমান শিক্ষকরা জাফর ইকবালকে অনুসরণ করে প্রকৃত শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধা অর্জনের পথে হাঁটবেন। দলীয় লেজুড়বৃত্তি, ক্ষুদ্র স্বার্থ বিলীন করে শিক্ষকতার মহান পেশার সম্মান রক্ষার্থে তারা এগিয়ে আসবেন বলেই আমাদের আশাবাদ। এটা হলে শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থা নিরসন হবে, নতুবা নয়।