![দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য](http://priyodeshnews.com/wp-content/uploads/2024/12/prothomalo-bangla_2023-03_eb6f4000-5f47-4aeb-9dac-e75072309778_Debapriya_Bhattacharya.jpg)
![](http://priyodeshnews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। আইন সভা, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে চুরির অংশ হয়ে গেছে। এটাই চোরতন্ত্র। এ জন্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা সহযোগী হলেন। এই চোরতন্ত্রের উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন।
আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। কমিটির অন্য সদস্যরাও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
চোরতন্ত্রে পরিণত করতে কারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে—এমন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি। শেষের দিকের আলোচনায় উঠে এসেছে, চোরতন্ত্রে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা বেশি কাজ করেছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত চারটি খাতের কথা বলেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ১ নম্বরে আছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় স্থানে অবকাঠামো; তৃতীয় স্থানে জ্বালানি এবং চতুর্থ স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিপদসংকুল হয়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পাঁচটি পরামর্শ দেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান। প্রথমত, গত পাঁচ মাসে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, আগামী ছয় মাস যেহেতু দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ সময়ে কী অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা। যেমন মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, টাকার মান কত হবে, তা জনগণকে জানানো। অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা উচিত। তৃতীয়ত, আগামী দিনের সীমারেখা কী, তা না বুঝে কেউ বিনিয়োগ করবে না। নিকট ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হবেন। দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন তিনি। চতুর্থত, তিনি মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণপ্রক্রিয়া স্থবির হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনটি মাপকাঠিতে বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই ২০২৬ সালের আগে বড় ধরনের অর্থনৈতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। এখনো সেই সময় হয়নি। পঞ্চমত, উন্নয়ন সহযোগী; বাজার–সুবিধা দেওয়ার দেশ; বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং শ্রমশক্তি নেয়, এমন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী বছরের প্রথম দিকে একটি উন্নয়ন ফোরাম বৈঠক করা, যেখানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সক্ষমতা ও আয়তন অনুসারে বাংলাদেশ এলডিসিতে থাকার মতো দেশ নয়। যদি কোনো কারণে ২০২৬ সালে উত্তরণ হতে না পারি, তাহলে আবার বলা হবে, “সোনার সংসার রেখে গিয়েছিলাম, এটা নষ্ট করে গেছে।” যাঁরা (বাজার–সুবিধাপ্রাপ্ত রপ্তানিকারক) এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দিতে তদবির করেন, তাঁদের গোড়া কোথায়, তা দেখেন। তাঁরা সংসদে প্রভাবশালী ছিলেন, রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। আমরা দেখেছি, একটি রপ্তানি খাতকে কীভাবে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কমিটির আরেক সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এত দিন ভেবেছিলাম, আমরা মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার শঙ্কায় আছি। এখন আমরা বলছি, আমরা সেই ফাঁদে পড়ে গেছি। পরিসংখ্যান দিয়ে এত দিন উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। বাস্তবে তা হয়নি। হিসাব গরমিলের কারণে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে গেছি।’
কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কাগজে–কলমে চুরির প্রমাণ নেই। বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের আমলে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বা ৩০০ কোটি ডলার ‘হাতবদল’ হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, চরম ত্রুটিপূর্ণ তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা না হলে পুরোনো খেলোয়াড়েরা (যারা এসব খাত ধ্বংস করেছে) ফিরে আসতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য এ কে এনামুল হক, আবু ইউসুফ, তাসনীম সিদ্দিকী, ইমরান মতিন প্রমুখ।