গাজায় শিশুহত্যা যেন এক ‘শখ’: ইসরায়েলি সাবেক কমান্ডারের মন্তব্য

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নির্বিচারে শিশু হত্যাকে ‘শখ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ইয়াইর গোলান। তার এই মন্তব্যকে সামনে টেনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাঈ বলেছেন, “ইসরায়েলের বর্তমান যুদ্ধাভিযান এক ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিচ্ছবি, যার সবচেয়ে নিষ্ঠুর দিক হলো শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা।”

স্থানীয় রেডিও রেশেট বেত-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়াইর গোলান বলেন, “একটি সুস্থ দেশ কখনও বেসামরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শিশুহত্যাকে শখ বানায় না, কিংবা গণউচ্ছেদ চালায় না।”

গোলান আরও বলেন, “নেতানিয়াহুর সরকার নীতিহীন ও নৈতিকতাবর্জিত। যেসব ইহুদিরা ইতিহাসে বারবার নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের পক্ষে এমন অনৈতিক কাজ করা অকল্পনীয়।”

এর একটি বেদনাদায়ক উদাহরণ ঘটে ২৪ মে। গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জার যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। এতে তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৭ জনের পোড়া মরদেহ হাসপাতালে আসে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই গুরুতর দগ্ধ। নিখোঁজ রয়েছে আরও ২ সন্তান—৭ মাস বয়সী ও ১২ বছর বয়সী। কেবল ১১ বছর বয়সী আদম বেঁচে যায়। তার স্বামী হামদি, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক, হামলায় গুরুতর আহত হন।

তবে এসমাইল বাকাঈ জোর দিয়ে বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুরো ইহুদি জনগণকে দায়ী করা ঠিক নয়। এটা সায়োনিস্ট চরমপন্থীদের অপরাধ, যারা ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি দখল ও তাদের উচ্ছেদে লিপ্ত।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু সরকার সম্পূর্ণ দায়মুক্তি নিয়ে এই শিশুহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে না। এটি স্পষ্টতই গণহত্যা, জাতিগত নিধন এবং এক নতুন হলোকাস্টের প্রতিচ্ছবি।”

২৬ মে গাজা সিটির একটি স্কুল, যা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আগুন ধরে যায় এবং অন্তত ৩৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৮ জনই শিশু।

এই ঘটনা এবং আলা আল-নাজ্জারের পরিবারের ওপর হামলা—এগুলো অক্টোবর ৭, ২০২৩ থেকে গাজায় চলমান শত শত আক্রমণের মধ্যে মাত্র দুটি উদাহরণ। বাকাঈ প্রশ্ন তোলেন, “এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ কখন শেষ হবে?”

তার মতে, নেতানিয়াহু এবং চরমপন্থী নেতারা গাজা ও দখলীকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের সরাতে দীর্ঘদিন ধরেই ছুঁতো খুঁজছিলেন। ৭ অক্টোবরের হামলাকে সেই অজুহাত বানিয়ে এখন শিশু হত্যা এবং পরিবারগুলোকে আতঙ্কিত করে উচ্ছেদের পথ তৈরি করা হচ্ছে।