কোভিড ১৯: বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বশেষ আপডেট

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ১৬২৯২ জন পরীক্ষা করে ৩৪১২জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৮ জন। দেশে আরো ৪৩ জন মারা গেছেন, মোট মারা গেছেন ১৫৪৫ জন। পুরুষ ৩৮ এবং নারী ৫ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৮৮০ জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৭৬৩৫ জন ।এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৬৫টি ল্যাবে পরীক্ষা হয়েছে।

দেশে ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী ২৮ জন মারা গেছেন১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ জন। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৬ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৮ জন । ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১০ জন। ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৫ জন। ৮১ বা তার বেশি বছর বয়সী ২ জন মারা গেছেন।

আজ আরো একটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ডিএমপি থেকে। নিহতের নাম রফিকুল ইসলাম, বয়স ৫৬ বছর। তিনি নারায়ণগঞ্জের একজন কনস্টেবল, কর্মরত অবস্থায় আক্রান্ত হন।এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট পুলিশ সদস্য মারা গেছেন ৩২ জন। ঢাকায় একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এদিকে বিশ্বে এখন ৯০ লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে, বিশ্বে মারা গেছেন ৪ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ।

দক্ষিণ কোরিয়া:

আরো ৪৬ জন রোগী পাওয়া গেছে। ৩০ জন বাইরে থেকে এসেছেন এবং বাকিগুলো স্থানীয় সংক্রমণ। এপ্রিল মাসেই দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতে থাকে। এরপর এই সম্প্রতি কিছু কিছু করে বাড়ছে সংক্রমণ। প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৫০ জন রোগী পাওয়া গেছে গেল মাসে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তুলনায় এই দেশটিতে অনেক কম মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
 বেইজিং:

আরো ১৩ জন রোগী পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চীনের এই শহরটিতে ২৪৯জন রোগী পাওয়া গেছে।এর আগে টানা ৫৭ দিনে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি শহরটিতে।অন্তত আশেপাশের ২৭টি এলাকার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে।চীনজুড়ে ২২ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র: গ্রিন কার্ড ও ভিসা স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে মারা গেছেন আরো ৪২৫ জন। এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রেই এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ও শনাক্ত সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি আক্রান্ত ও মৃত দেশটিতে। যদিও সামগ্রিক সংক্রমণ কমছে কিন্তু ২৩টি রাজ্যে সংক্রমণ বেড়েছে।

২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত বিদেশীদের জন্য গ্রিন কার্ড ও ভিসা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এটা নিশ্চিত করেছেন। হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হচ্ছে আমেরিকানদের জন্য এটা বাড়তি একটা চাকরির বাজার উন্মুক্ত করবে। সমালোচকরা বলছে মহামারিকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী আইন কঠিন করে তুলছে। প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের ভিসা ও গ্রীন কার্ড স্থগিত হয়েছে। ৫ লাখ ২৫ হাজার চাকুরিতে এর প্রভাব থাকবে।

জার্মান:

আবারো লকডাউন, একটি কারখানায় ১৩০০ জনের দেহে ভাইরাস। মাংস প্যাকেট-জাত করার একটি কারখানায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জার্মানিতে নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। দেশের নর্থ-রাইন-ওয়েস্টফারিয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গুটেরস্লো জেলায় – যেখানে ৩৬০,০০০ লোকের বসবাস- লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। ৩০শে জুন পর্যন্ত এই লকডাউন বলবত থাকবে। টনিজ নামে ঐ মাংস প্যাকেট-জাত করার কারখানার কমপক্ষে ১৩০০ শ্রমিক-কর্মচারীর শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। জার্মানিতে মে মাসে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এই প্রথম তা আবার আবার আরোপ করা হচ্ছে। জার্মানি যেভাবে করোনাভাইস মোকাবেলা করেছে, তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তবে সেদেশে নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
পাকিস্তান:
 জাতীয় ক্রিকেট দলের তিনজন কোভিড আক্রান্ত। ইংল্যান্ড সফরের কিছুদিন আগে পাকিস্তানের তিনজন ক্রিকেটার কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে এই সপ্তাহের শেষে একটি বিশেষ বিমানে উড়াল দেবে দল। তার আগে সব ক্রিকেটারকে টেস্ট করা হচ্ছে। জুলাই মাসে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা শুরু হবে। পাকিস্তানে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৯৫ জন।
ইংল্যান্ড:
প্রধানমন্ত্রী আজ কড়াকড়ি শিথিলের ঘোষণা দেবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আজ কড়াকড়ি শিথিল করার ঘোষণা দেবেন। চৌঠা জুলাই থেকে পাব, রেস্টুরেন্ট, গ্যালারি ও থিয়েটার খুলে দেয়া হবে। ২ মিটার থেকে কমিয়ে সামাজিক দূরত্ব এক মিটার করা হবে। পাবে যারা যাবেন তাদের একটা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। মুখোমুখি হওয়া এড়াতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পূর্ব নির্ধারিত বুকিং সিস্টেম অনুযায়ী ধারণক্ষমতার চেয়ে কম মানুষ অংশ নিতে পারবে।
ভারত:

আরো ১৫ হাজারের কাছাকাছি রোগী শনাক্ত। মোট আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার লাখ রোগী। ভারতে সুস্থ হয়ে গেছেন দুই লাখ ৪৮ হাজার রোগী। বর্তমানে ভাইরাস বহন করছেন ১ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি রোগী।

ভারতের মুম্বাইয়ের একটি বস্তি, যেখানে ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। মাত্র ২.৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ধারাভি বস্তি। ১০০ বর্গফুটের মধ্যে যেখানে ৮ থেকে ১০ জন লোক বাস করেন। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি। কিন্তু অবাক করা বিষয় এই জায়গাটিতে খুব বেশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়নি। এই জায়গাটিতে নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে এবং যাদের কাজ নেই তাদের খাবার দেয়া হচ্ছে। নগর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত টেস্ট ও ট্র্যাক করে একটা বড় অংশকে আইসোলেশনে রেখেছে।

দিল্লির দাঙ্গায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে আটক অন্তঃসত্ত্বা মুসলিম ছাত্রী সফুরা জারগার জামিন পেয়েছেন। তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা নিয়ে এমনকি ভারতের বাইরেও ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়। এপ্রিলে যখন মিজ জারগারকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পুলিশ তাকে দিল্লি দাঙ্গার অন্যতম ইন্ধনদাতা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ঐ অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করেছে সফুরা জারগারের পরিবার। তাদের বক্তব্য – তিনি শুধু নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রাজধানীতে হিন্দু-মুসলিম ঐ দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা যায়, যাদের সিংহভাগই ছিল মুসলিম।

পিটার পায়োট:

বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন ভাইরাস শিকারি বা সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ তিনি। ১৯৭৬ সালে ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার করেন তিনি, এরপর এইচআইভি বা এইডস নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এর আগে কখনো কোনো বড় রোগে আক্রান্ত হননি তিনি। কিন্তু এবার পিটার পায়োট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে মাংস প্রক্রিয়ার জায়গাতেই সংক্রমণের নেপথ্যে

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে শত শত কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন মাংস প্রক্রিয়াজাত করার জায়গায়। জার্মানিতে একটি প্লান্টেই ১৫০০ বা তার বেশি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। মূলত মাংস যেখানে প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেটিই সবচেয়ে ভাইরাস সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত জায়গা। ড্রপলেট থেকে সংক্রমণ হয়, এই ড্রপলেটের উৎস হতে পারে কফ, সর্দি। মাংস যেখানে প্রস্তুত হয় সেটি ঠান্ডা ও স্যাতস্যাতে থাকে, ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেন এসব জায়গায় ড্রপলেট ছড়ায় সহজে এবং টিকে থাকে অনায়াসে।