কোভিড ১৯ আপডেট: বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি

নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,১১৪ জন,আক্রান্ত হয়ে ৪২  জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ

নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,১১৪ জন। মোট শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫৬,৩৯১ জনে।। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪,৬৫০টি । এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ৮১৭,৩৪৭টি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪২  জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন  ১,৯৬৮ জন।

যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ জন ও নারী ১০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৩১ জন ও বাড়ীতে মারা গেছেন ১১ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের বয়সের হিসেব: ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের ১ জন ।২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ জন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১ জন ।৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৫ জন ।৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১১ জন ।৬১ থেকে ৭০ বয়সী ১১ জন ।৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৭ জন। ৮১ থেকে ৯০ বছরের ৩ জন।
এ যাবত কালের মৃতদের বয়স হিসেব:০ থেকে ১০ বছর বয়সের ১২ জন। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের ২৩ জন ।২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৭০ জন ।৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৪৭ জন ।৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২৯০ জন ।৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭১ জন ।৬০ ঊর্ধ্ব বয়সের ৮৫৫ জন।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১,৬০৬ জন সুস্থ হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত মোট ৬৮,০৪৮ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে জানানো হয়।

বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশিদের অবস্থা

যেসব দেশে বাংলাদেশিরা সচরাচর বেশি যাতায়াত করে, সেসব দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন কী অবস্থা রয়েছে?

ভারত:

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারত যায়। বাংলাদেশের মানুষ ব্যবসা, চিকিৎসা এবং প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ভারতে যায়। কিন্তু ভারতের সাথে বাংলাদেশের সবগুলো স্থল বন্দর এখন মানুষ আসা-যাওয়ার জন্য বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভারতে সব ধরণের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ রয়েছে।

জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে কিছু দেশের সাথে ভারতের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যোগাযোগ শুরু হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

ধারণা করা হচ্ছে যাতায়াত একেবারে উন্মুক্ত করা না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে। এখনও পর্যন্ত সরকারি কোন ঘোষণা আসেনি।

সিঙ্গাপুর:

সিঙ্গাপুর সরকার দেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রা ধীরে-ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার কাজ শুরু করেছে।তবে যারা স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে এখনো বাধা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্বল্প সময়ের জন্য যারা সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য একটি উপায় আছে।যারা জরুরি ব্যবসা কিংবা অফিসিয়াল কাজে সিঙ্গাপুর যেতে চান তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

এই ব্যবস্থাটিকে বলা হয় গ্রিন/ফাস্ট লেন অ্যারেঞ্জমেন্ট। এর আওতায় একটি সেফ ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। এটি ছাড়া সিঙ্গাপুরে ঢোকা যাবেনা।এছাড়া সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে যাওয়া যাবে।

যেসব বিদেশী নাগরিক স্বল্প সময়ের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করবেন তাদের জন্য কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।১৭ই জুন থেকে যারা সিঙ্গাপুরে যাবেন স্বল্প সময়ের জন্য তাদের জন্য সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ টেস্ট করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সফরকারীকে টেস্টের খরচ বহন করতে হবে।

থাইল্যান্ড:

থাইল্যান্ডে যারা ব্যবসার কাজে যাবেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।এছাড়া যারা চিকিৎসার জন্য যাবেন তাদের ক্ষেত্রেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে থাইল্যান্ড।এর পাশাপাশি রয়েছে দক্ষ কর্মী এবং বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী।তবে যারা থাইল্যান্ড যাবেন তাদের ক্ষেত্রে ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ থাকতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের থাইল্যান্ডে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

এই শর্ত মেনে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে।বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর পর্যটনের জন্য থাইল্যান্ড যায়। তবে দেশটি আপাতত পর্যটন ভিসা দিচ্ছে না।

ইউরোপ:

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিদেশীদের আগমনের জন্য তাদের বিমান চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশে এই তালিকায় নেই। এছাড়া আমেরিকা, ব্রাজিল এবং রাশিয়াও এই তালিকায় নেই। কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:

১. যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম। অর্থাৎ যেসব দেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৬ জনের কম সংক্রমিত হয়েছে সেসব দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২. যেসব দেশে সংক্রমণের হার নিচের দিকে। ৩. যেসব দেশে সামাজিক দূরত্বের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে

মালয়েশিয়া:

শুধু পর্যটনের জন্য বিদেশ থেকে এখন মালয়েশিয়া যাওয়া বন্ধ আছে। বর্তমানে স্পাউস, বিজনেস এবং প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাবে। তবে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশে মালয়েশিয়ার দূতাবাসের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

মালয়েশিয়া ঢোকার আগে বিমানবন্দরে তাদের অবশ্যই ‘কোভিড-১৯ মুক্ত’ সনদ দেখাতে হবে। যদি সেটি না থাকে তাহলে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

যুক্তরাজ্য:

যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের বিমান চলাচল এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে ঢাকা থেকে লন্ডন যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মুক্ত সনদের প্রয়োজন নেই। তবে একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।

এছাড়া লন্ডনে পৌঁছানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন তারাই এখন যেতে পারছেন। অতি প্রয়োজনীয় না হলে মহামারির এই সময় নতুন করে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না।

যুক্তরাজ্য:

তোপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাবা

করোনাভাইরাস মহামারিতে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও গ্রীসে এক সফর করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বাবা স্ট্যানলি জনসন।

মি. জনসন বুধবার তার বিমান অবতরণের ওপর একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিও এবং অ্যাথেন্স বিমান বন্দরে মাস্ক পরা অবস্থায় একটি সেলফি পোস্ট করেন। তিনি ডেইলি মেইল পত্রিকাকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় কাজেই তিনি অ্যাথেন্স গিয়েছেন। সেখানে তার একটি বাড়ি রয়েছে যেটি ভাড়া দেয়া হয়।

গ্রীসে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তিনি বাড়িটিতে করোনা মহামারি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি রাখতে চান বলে জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর ‘প্রয়োজন ছাড়া’ সবধরনের সফর না করার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র:

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এখনো কোন বিধি-নিষেধ নেই। ঢাকা থেকে যেসব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চালু করেছে তাদের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যাবে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির সময় নতুন কোন ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। যাদের পুরনো ভিসা আছে শুধু তারাই ভ্রমণ করতে পারবে।

 

ভারত

ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে চলেছে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারই দেশের মোট আক্রান্ত ছয় লক্ষ পেরিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৯০৩ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার টপকে গেল। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে সংক্রমিত হননি। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ছ’লক্ষ ২৫ হাজার ৫৪৪ জন।

আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে মোট মৃত্যু ১৮ হাজার পার করল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭৯ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ১৮ হাজার ২১৩ জনের।

আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। এখন দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা সক্রিয় করোনা আক্রান্তের (মোট আক্রান্ত থেকে মৃত ও সুস্থ হয়ে ওঠা বাদ দিয়ে) সংখ্যার চেয়ে বেশি। দেশে মোট আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটা চার লক্ষের দিকে এগচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৩২ জন সুস্থ হয়েছেন। যা ২৪ ঘণ্টার নিরিখে এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট তিন লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৯২ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।

চালু হল কফি হাউজ

  কফি হাউজের আড্ডাটা আবার চালু

ভারতে করোনাভাইরাস মহামারির বিধিনিষেধ শিথিল করার সাথে সাথে ব্যাবসা-বাণিজ্য আবার চালু হচ্ছেএই তথাকথিত ‘আনলক-টু’ ধাপে কী কী করতে হবে, সে সম্পর্কে সরকার বিস্তারিত নির্দেশমালা বুধবার প্রকাশ করেছে।কলকাতায় বিখ্যাত কফি হাউজ খুলে দেয়ার পর আবার শুরু হয়েছে আড্ডা।কিন্তু কফি হাউজ এখন আর কফি রসিকদের ভীড়ে গমগম করছে না। খদ্দেরদেরও বসতে হচ্ছে নিরাপদ দূরত্ব মেনে।

আফ্রিকা:

আফ্রিকান ইউনিয়নের একজন কমিশনার আমানি আবু-জেইদ জানিয়েছেন, পর্যটন খাতের আয় পুরো মহাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ১০%, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।

করোনাভাইরাস মহামারি এই হারে চলতে থাকলে আফ্রিকার কয়েকটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।গত মার্চ মাসে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা জানিয়েছিল, এই মহামারিতে পর্যটন শিল্পে পাঁচ কোটি লোকের চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স চাকরি ছাঁটায়ের ঘোষণা করেছে। কয়েকটি এয়ারলাইন্স দেউলিয়া হয়ে গেছে।

বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকউইটসি মাসিসি কোয়ারেন্টিনে

কোয়ারেন্টিনে গেলেন বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট

বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকউইটসি মাসিসি তার এক সহকর্মীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর নিজেকে কোয়ারেন্টিনে বন্দি করেছেন। সে দেশের সরকারের এক ঘোষণায় এখবর জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন এমন আরও কিছু কর্মকর্তাও কোয়ারেন্টিনে গেছেন বলে ঘোষণায় বলা হয়। পঁচিশ লক্ষ লোকের বাস বোতসোয়ানায় এপর্যন্ত ২২৭টি কেস ধরা পড়েছে।