প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের কৃষিটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি, তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার গবেষণার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন, তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে, তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে। উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম, ভুট্টা এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন। তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করছে। দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে, তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সরকার অন্যান্য সহযোগিতাও করে যাচ্ছে।
কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার সহায়তা করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পান, তার জন্য আমরা যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে। কারণ, যারা উৎপাদন করবেন তারা খাবার পাবেন না, বা তাদের ছেলেমেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে—এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, বর্গাচাষিরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পান, আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ আমরা ১২ টাকায় নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেই সঙ্গে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ, যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি, যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেইসঙ্গে আমরা সেচকাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বর্তমানে সেচ কাজে সোলার-প্যানেল ব্যবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন, বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কি না বা কতটুকু করবেন, সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন, সে ধরনের তথ্যকেন্দ্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে হাতে তুলে দিয়েছি।