করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপাকে পড়া দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে যুক্তরাজ্য। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ২০ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।জুলাই থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও গতি এত কম, যা অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে পারবে না বলেই মনে করছে গবেষণা সংস্থাগুলো।সেই সঙ্গে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা ঋণ পরিস্থিতিকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির অন্যতম গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজের (আইএফএস) এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, এ বছর যুক্তরাজ্য সরকারের ঋণ গ্রহণ এমন স্তরে চলে যাবে, যা আগে দেখা যায়নি। সংস্থাটি বলছে, করোনার কারণে অর্থনীতি রক্ষা করতে কর্মসংস্থান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিপর্যায়ের আয় বাঁচানোর প্রয়োজন ছিল।এ জন্য অর্থনীতিতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।তবে এর কারণে ভবিষ্যতে বড় কর বৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে পড়বে।
জনগণের যে পরিষেবা দেওয়া হয়, তা নির্বাহের জন্য বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছ থেকে ঋণ নেয় যুক্তরাজ্য সরকার। পরে করের মাধ্যমে তার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। সংস্থাটি বলছে, এ বছরের মার্চে ২০১৪-২৫ সালে যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, অর্থনীতি তার থেকে ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে। সেই সঙ্গে সরকারের ঋণের বোঝাও বাড়বে অনেক।বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব সময় ভারসাম্য বজায় রাখা হবে, সরকার এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখা সম্ভব হবে না। এ বছরে সরকারের বার্ষিক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অবস্থানে চলে যাবে। জাতীয় ঋণ অর্থনীতির চেয়ে আরও বড় হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ঋণ জিডিপির ১১০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। তবে আইএফএস এ–ও সতর্ক করেছে যে এখন কর বাড়ানো বা ব্যয় কমানোর সময় নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য বাধার পাশাপাশি মহামারির কারণে অর্থনীতির সহায়তার প্রয়োজন। আপাতত এখন সরকারের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কম রয়েছে।
গত আগস্টে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের ঋণের পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ঋণের বোঝায় নতুন করে যোগ হয়েছে ২২ হাজার ৭৬০ কোটি পাউন্ড। কেবল জুলাইয়ে সরকার ২ হাজার ৬৭০ কোটি পাউন্ড ঋণ নেয়।
যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক জানান, ‘চলমান সংকট জনসাধারণের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর চাপ তৈরি করেছে। এতে আমাদের অর্থনীতি একটি ধাক্কা খেয়েছে। লাখ লাখ চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত মাসে আইএফএসের এ গবেষণায় বলা হয়, গড়ে যুক্তরাজ্যের মানুষের বার্ষিক প্রকৃত মজুরি এক দশকের আগের তুলনায় অন্তত ৮০০ পাউন্ড কমেছে। সে কারণে বিশ্লেষকেরা একে হারানো দশক আখ্যা দিয়েছেন।
তাঁরা বলছেন, এই দশকে মানুষের অবস্থার অবনতি হয়েছে। ওই গবেষণায় উঠে আসে যে ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী লোকজন এখন ২০০৮ সালে একই বয়সী মানুষের চেয়ে বছরে ২ হাজার ১০০ পাউন্ড কম আয় করছেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মানুষের আয় কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০-৩০ বছর বয়সী মানুষের আয় কমেছে ৫ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব কর্মক্ষম মানুষের আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
১৭০৬ সালের পর এমন অর্থনৈতিক সংকোচন আর দেখা যায়নি ব্রিটিশ অর্থনীতিতে। ব্যাংকটির পুরনো তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে তিন শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রায় ২৫ শতাংশ কমবে।আর বছর শেষে ২০১৯ সালের অর্থনীতির থেকেও ৩০ শতাংশ ছোট হয়ে যাবে এই বছরের অর্থনীতি।বেকারত্ব বাড়বে মোট বেকারের ৯ শতাংশ।যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্চ মাসে সুদের হারকে রেকর্ড পরিমাণ কমিয়ে এনে একটি দু’শ বিলিয়ন পাউন্ডের (২৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বন্ড ক্রয় কর্মসূচি চালু করেছে।কয়েক সপ্তাহের লকডাউন ব্যবস্থা এবং উত্পাদন কমে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক শককে মোকাবেলার জন্য চালু করা হয়েছে এই কর্মসূচি।
অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস হুমকির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেওয়া জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া জানাবে ব্যাংকটি।তবে নতুন কোনো প্রণোদনামূলক পদক্ষেপগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।দেশটির অর্থনীতি বাঁচাতে আরো কিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা পরিস্থিতিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য সদস্যদের একমত হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে আগামী বছর দ্রুত অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে করোনা মহামারি ও লকডাউন বর্ধিত করার ওপর।
বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইউরোপের অনেক দেশ। যেখানে ব্রিটেনের প্রাণহানি এবং আক্রান্তের সংখ্যা নিছক কম নয়।এ ক্লান্তিলগ্ন সময়ে ব্রিটেন পাশে ছিল না ইউরোপের কোনো দেশ।কার্যত দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও কোনো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে এ দুর্যোগকালে ইইউ কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমনকি ইইউ থেকে বের হয়ে আসার হুমকি দেন; যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যর্থতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলন ঘটে। বর্তমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মাঝে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত, যা সময়ের পরিক্রমায় আরো তীব্রতর হচ্ছে, বাড়ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব।বলতে দ্বিধা নেই, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করে একলা চলা নীতি অনুসরণ করার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় ধরনের নেতৃত্ব ও আস্থা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।অদূর ভবিষ্যতে ইইউ প্রতি আস্থা হারিয়ে ব্রিটেনের ন্যায় অন্য দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করে একলা পথ চলা নীতি অনুসরণ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।বলা যায়, এখন ব্রিটেনের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি নীতিমালা ও আইনকানুন থেকে সম্পন্ন স্বাধীন। তাদের আর ইইউর কোনো আইন বা নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে না।আগামীর প্রজন্ম বেড়ে ওঠবে পুরাতন ব্রিটেনে নতুন স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে একলা চলা নীতি গ্রহণে রাজনীতি ও নতুন অর্থনীতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রিটেনবাসীকে এক কাতারে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
অপরদিকে আগামীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইইউভুক্ত দেশগুলোর মাঝে সুসম্পর্ক ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জন করা। স্থবিরতার মধ্য দিয়েই ২০১৯ সাল শেষ করেছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। ব্রিটিশ চেম্বারস অব কমার্সের (বিসিসি) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার সম্ভাবনায় সৃষ্ট চাপ, বড় হারে ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে গত বছরের শেষটা মোটেই ভালো কাটেনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির। নভেম্বরে ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ছয় হাজার কোম্পানি বিসিসি পরিচালিত জরিপে অংশ নিয়েছিল। জরিপ ফলাফলে গত দশক শেষে ব্রিটেনের অর্থনীতির হতাশাজনক চিত্রই উঠে এসেছে।ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ সেবা খাত। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে খাতটির অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। কারখানা রফতানি ও স্থানীয় আদেশ নির্দেশকগুলো এক দশকের মধ্যে প্রথমবার পরপর দুই মাস ঋণাত্মকে ছিল এবং ম্যানুফ্যাকচারে বিনিয়োগ কারীদের পরিকল্পনা আট বছরের নিম্নে নেমে আসে।বিশ্লেষকেরা বলছেন ভি শেপ পুনরুদ্ধার হচ্ছে না যুক্তরাজ্যের। ভি শেপ পুনরুদ্ধারের মানে হলো অর্থনীতির দ্রুত পতন আবার দ্রুত উত্থান। করোনার কারণে যত দ্রুত সংকোচন হয়েছে অর্থনীতির, ততটা দ্রুত আবার সব সচল হচ্ছে না।
পৃথিবীর মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যে আমেরিকায় নয়, ব্রিটেনেই— তা এখন প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্রিটেনের প্রায় ৬.৫ কোটি জনসংখ্যায় ১,০৪,০০০ মৃত্যুই (জানুয়ারির শেষে) একটি দেশে করোনার রেকর্ড। আমেরিকা-ভারত-রাশিয়া এবং ব্রাজিলে করোনাক্রান্তের মৃত্যুসংখ্যা আরও বেশি হলেও, এই সব দেশের জনসংখ্যা ব্রিটেনের চেয়ে অনেক বেশি। এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যু এবং তার আগে দিনে হাজার হাজার মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ব্রিটেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। অন্যান্য বিষয় নাহয় বাদই থাক। এই দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিন্যাস এবং পরিষেবাও কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় উন্নত, সুপরিকল্পিত এবং আধুনিক।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য দফতর তথা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) দশ দিন আগের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি ৩০ সেকেন্ডে দেশের কোনও না কোনও হাসপাতালে এক জন কোভিড-আক্রান্ত ভর্তি হচ্ছিলেন। দিনে আক্রান্তই হচ্ছিলেন পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার। দ্রুত টিকাকরণের মাধ্যমে বর্তমানে সেই সংখ্যা নিম্নমুখী, তবু এখনও দৈনিক মৃত্যু ১২০০-১৫০০-র কাছে। ব্রিটেনের মতো ছোট্ট দেশে এই পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি! অতীতের অন্যান্য মহামারি, বিশ্বযুদ্ধকালের মৃত্যুসংখ্যাকেও করোনা অনেকটা অতিক্রম করে গিয়েছে।
রানির দেশে করোনায় মৃত্যুসংখ্যার এই ঊর্ধ্বগতির কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ দর্শানো হয়েছে। গোড়ার দিকে প্রশাসনিক দুর্বলতা আর ঢিলেঢালা সামাজিক নীতিকে দুষেছেন কেউ কেউ। লকডাউন, দূরত্ব রক্ষা, বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি পালন, স্কুল-কলেজ এবং দোকানপাট, বার-রেস্তরাঁ ইত্যাদি খোলা এবং বন্ধ রাখা নিয়ে প্রশাসন কঠোর হলেও, ঠান্ডা পড়ার আগে কিছু ছাড়ে গাফিলতির পরিচয় মিলেছিল।তখন মনে রাখা উচিত ছিল, এ দেশের শীতের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ও বৃষ্টিতে, রোদবিহীন সংক্ষিপ্ত দিনে মানুষ শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুখে বেশি ভোগেন। তায় তখনও ভ্যাকসিন ছিল না। ফলে করোনার প্রকোপে ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো ধাক্কা আসতে পারে। সম্ভবত তাকেই ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বলা হয়েছিল।
অনেকের মত, নিয়মনিষ্ঠ, পরিচ্ছন্ন এবং অপেক্ষাকৃত দূষণহীন ব্রিটেনে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বা ইমিউনিটি কম বলেই করোনা শক্তিশালী।মানুষের সাদা, কালো বা মিশ্র বর্ণ নিয়েও কথা উঠেছে।কিন্তু আবহাওয়া, অর্থনৈতিক অবস্থা, প্রতিরোধ ক্ষমতা, না কি বর্ণ— করোনার প্রাদুর্ভাবের মূলে যে কী, কেউই ঠিক জানে না।ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন বা চরিত্রগত কাঠামোর বিবর্তন ব্রিটেন এবং কয়েকটি দেশে সমস্যা এনেছে। সব মিলিয়ে পৃথিবীর ছোট, অথচ গুরুত্বপূর্ণ দেশটির আর্থসামাজিক ক্ষেত্র ছাড়াও, স্বাস্থ্য দফতরটির অবস্থা শোচনীয়। অথচ, এই যুগে ব্রিটেনের এনএইচএস-এর মতো উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা মেলা ভার!
ব্রিটেনের নাগরিকদের যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। কোনও চিকিৎসার জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে টাকাপয়সা লেনদেনের নিয়ম নেই। সাধারণ চিকিৎসকেরা (জিপি) এনএইচএস-এর মূল স্তম্ভ।নাগরিকদের কোনও জিপি-র কাছে নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। অসুস্থতার সময় প্রথমে তাঁর কাছে যেতে হয়।জিপি’রাই প্রয়োজনবোধে রোগীদের হাসপাতাল, তথা বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফার করেন।এই পদ্ধতিতে হাসপাতালের দ্বারস্থ না হয়েই ৮০%-এরও বেশি অসুখ সেরে যায়।দেশের সকলের চিকিৎসার মান এক।করোনাবিধ্বস্ত হওয়ার আগেই দেশে ১২৫০টি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ছিল।এখনও আছে।এনএইচএস-এর কর্মী ১০,৯০,০০০। চিকিৎসক ১,২০,০০০।নার্স প্রায় ৩.৫ লক্ষ।দেশে প্রায় ৯,৫০০ জিপি-সার্জারি বা ডাক্তারের চেম্বার।
করোনার তাণ্ডব এখানে এতটাই যে, এই সুবিন্যস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থাও ধরাশায়ী। এই মুহূর্তে শুধু হাসপাতালেই করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩২,০০০। কিছু দিন আগেও তা ছিল ৬০,০০০-এর আশেপাশে।এই বিপুল সংখ্যক রোগীর জরুরি চিকিৎসার জন্য বহু নিয়মিত চিকিৎসা ব্যাহত। যেমন, কিডনি-হার্ট-লিভার বা ক্যানসারের ফলো আপ, জরুরি অপারেশন, প্রতিস্থাপন, নিউরো সার্জারি, ইউরোলজি, চোখের অপারেশন, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট— প্রায় সব বন্ধ। হাসপাতালের অধিকাংশ বেড কোভিডের দখলে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ধরে এখন মৃত্যুসংখ্যা দিনে হাজারের উপর।হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সের লাইন।দেশের বিভিন্ন শহরে অস্থায়ী এসি মর্গ তৈরি করতে হয়েছে মৃতদেহ সম্মানজনক অবস্থায় রাখতে।
সূএ: ১)আইএফএস
২) এনএইচএস
৩)ইন্টারনেট