করোনায় দেশে যারা শনাক্ত হচ্ছেন তাদের প্রায় ৮৫ ভাগই ভ্যাকসিন নেননি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, নন ভ্যাকসিনেটেড মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এটি সময় মতো করা গেলে ওমিক্রনের কারণে দেশে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ওমিক্রন মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক জরুরি ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের ১৪ কোটির মতো মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে, এখনও আমাদের টার্গেট পপুলেশনের আরও তিন কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই তিন কোটি মানুষের বেশির ভাগই পরিবহণ খাতের, শিল্প কারখানায় কর্মরত সদস্য বা বিভিন্ন দোকানপাটে কর্মরত কর্মী। এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই আমাদের এই তিন কোটি
তিনি বলেন, দেশে এখন ওমিক্রন খুব দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। দেশে সংক্রমণের হার মাত্র ১ ভাগ থেকে বেড়ে ৩২ ভাগ হয়েছে। মৃত্যুহার মাত্র ১ ভাগ থেকে ১৭ ভাগ হয়ে গেছে। অথচ বাণিজ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে মানুষ গাদাগাদি করে চলাফেরা করছে। সেখানে অনেকেই মাস্ক পরিধান করছে না। দেশের অন্যান্য জনবহুল স্থানেও একই অবস্থা। সরকার কোভিডের প্রথম দুটি ঢেউ দেশের মানুষের সহায়তায় সফল হয়েছে। এবারও দেশের মানুষের সহায়তা ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব হবে না। আর এ যাত্রায় সফল হতে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
সভায় দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ এভার কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আরিফ ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কত দিন আইসোলেশনে রাখা হবে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় আছে জানালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইসোলেশন পলিসি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে দ্রুতই একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। মন্ত্রী এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাঁচ থেকে সাত দিন আইসোলেশনে রাখার বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান। পাশাপাশি করোনা চিকিৎসায় পুরাতন ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কিছুটা সংশোধন করে নতুন করে আরেকটি ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি, আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান এমপি, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হাসান, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবীর প্রমুখ।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ওমিক্রন নিয়ে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনা মোকাবিলায় সরকার বিগত দুটি ঢেউ যেভাবে সফল হয়েছে, একইভাবে এবারও তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করে সরকার সফল হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মুবিন খান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেসরকারি মেডিকেল খাত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৬২ ভাগ অবদান রাখে। দেশে এর আগে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি থেকে কাজ করে গেছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আর এবারের ওমিক্রন মোকাবিলাতেও প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সরকারের পাশে থেকে সরকারের সাথেই কাজ করে যাবে।
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অন্য সদস্যরাও এ সময় একমত পোষণ করে বক্তব্য দেন।