

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দলটির নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও জনগণের অধিকার হরণে সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেছে। তাই সংবিধান ও নির্বাচন আইনের আলোকে এ দুই দলের নিবন্ধন বাতিল করা জরুরি।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, সোমবার (১০ মে) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় দলটির যাবতীয় কার্যক্রম— বিশেষ করে সাইবার স্পেসে— নিষিদ্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এটি যেন একটি প্রতীকী সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ না থাকে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তা সফল করতে হলে কেবল আওয়ামী লীগ নয়, তাদের সহযোগী রাজনৈতিক শক্তিকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। জাতীয় পার্টি বারবার অবৈধ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। ৫ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ, ২২ মার্চ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং সর্বশেষ ৯ মে পল্টন মোড়ে গণমিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি—সবকিছুই ছিল সরকারকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার ধারাবাহিক প্রয়াস।
রাশেদ খাঁন বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরে এখনো অনেক সুবিধাভোগী ও দোসর রয়েছে। তারা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ, প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতর থেকে ফ্যাসিবাদী শাসনকে টিকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, ৮ মে রাত ৩টা ৫ মিনিটে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েই তিনি দেশ ছাড়েন। অথচ তাকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও হত্যা মামলার প্রসঙ্গ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি। বরং চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এই ঘটনার জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে, যেটি দায়িত্ব এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনায় তার গাফিলতি ছিল, না কি সরাসরি সহায়তা— তা জাতি জানতে চায়। আমরা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।
সংগঠনের দাবি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও শুধুমাত্র সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ করলেই চলবে না। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা প্রশাসনিক সুবিধাভোগী, নিরাপত্তা বাহিনীর কুখ্যাত সদস্য ও ভুয়া এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদী কাঠামো অক্ষুণ্ন থাকবে এবং চলমান বিপ্লব ব্যর্থতার মুখে পড়বে।
রাশেদ খাঁন বলেন, যেসব ডামি এমপি-মন্ত্রী পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের পলায়নে সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের জনগণ জানতে চায়, সরকার কি তাদের সেফ প্যাসেজ দিয়েছে?
সংবাদ সম্মেলনের শেষে গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, যেন জাতীয় ঐকমত্য ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা হয়।
সংগঠনটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জনগণ এবার আর প্রতারণা সহ্য করবে না। কেবল চিহ্নিত দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল নয়— এই মুহূর্তে প্রয়োজন সত্যিকারের একটি রাজনৈতিক সংস্কার। এর অংশ হিসেবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর, সাহসী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।