একুশের ফ্যাশন উদ্যোগ

জিয়াউদ্দীন চৌ:(জেড সেলিম)

একুশ আমাদের অহংকার, একুশ আমাদের গর্ব। অমর একুশে আমাদের কাছে যেমন শোকের প্রতিশব্দ, তেমনি গর্বেরও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি এ উদযাপনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মিশ্র এই আবেগের বহিঃপ্রকাশেও আছে নানা ভঙ্গিমা। এ সময়ে মানুষের পেশাকেও প্রকাশ পায় আবেগের ছোঁয়া। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো মহান ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য তাদের পোশাকগুলোয় ফুটিয়ে তুলে উপস্থাপন করে ক্রেতাদের সামনে।

আমাদের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো পাকিস্তান। বাংলার বদলে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিলো তারা। রক্তের দাম দিয়ে ভাষাকে রক্ষা করেছে এদেশের বীর ছেলেরা। আর সেই থেকেই ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখটা ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে লিখে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার বানানো হয় এবং প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারীতে তাদেরকে স্মরণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব তোলা হয় এবং পরবর্তীতে প্রস্তাব পাশ হয়। এর পর থেকে পুরা বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বেশ ক’বছর ধরে পোশাকের রঙে ও নকশায় উপস্থাপন করছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বা শিল্প-সংস্কৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষেও ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে বর্ণমালায় আচ্ছাদিত পোশাক। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায় একেকটি ফ্যাশন হাউস একেকটি থিম ধরে তাদের পোশাকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে উপস্থাপন করেছে। কোনো হাউস শহীদ মিনারের ছবি, কোনো হাউস বাংলা বর্ণমালা, আবার কোনো হাউস নকশা করেছে ভাষা আন্দোলনের পোস্টার, গান, কবিতা বা নানা স্মারক দিয়ে। তবে ঘুরেফিরে প্রায় সব হাউসের পোশাকেই প্রাধান্য পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব। আর এসব নকশা করা হয়েছে সাদা, কালো, লালসহ নানা মাধ্যমের রঙে।

অমর একুশে সামনে রেখে দেশীয় ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ [এফইএবি] এর সদস্য প্রতিষ্ঠান নিপুণ ক্রাফট, অঞ্জনস, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, বাংলার মেলা, দেশাল, মিয়াবিবি, এম ক্রাফট, সৃষ্টি, নন্দন কুটির, কাপড়-ই-বাংলা, অন্যরকম প্রমুখ রকমারি পোশাকের আয়োজন করেছে।

একুশের মেকআপেও ফুটিয়ে তোলা উচিত একুশের চেতনা। মুখে সানস্ক্রিন মেখে হালকা ফেসপাউডার দিয়ে বেস বানিয়ে নিন। চোখে মোটা করে কালো কাজল দিয়ে ঠোটে হালকা গোলাপী, ন্যুড, ব্রাউন, মোকা, টেরাকোটা অথবা হালকা কমলা রঙ এর লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। সাদা কালো পোশাকের সঙ্গে কপালে পরে নিন একটি বড় কালো টিপ। বাঙ্গালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে হাতে সাদা কালোর মিশ্রণে কিছু কাঁচের চুড়ি পরে নিতে পারেন। যদি শহীদ মিনারে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে অবশ্যই হিল জুতা না পরে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরুন। কারণ শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার সময় অনেকটা পথই হেঁটে যেতে হয়। স্যান্ডেলের সঙ্গে মানানসই একটি কালো অথবা সাদা ব্যাগ নিয়ে নিন। ব্যাগে অবশ্যই একটি ছাতা, একটি চিরুনি, পানির বোতল ও সানগ্লাস রাখবেন।