জিয়াউদ্দীন চৌ: ( জেড সেলিম )
ইসরাইলের সবধরনের অন্যায় কাজ, নৃশংসতা যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, সব আবদার যেভাবে মেনে নেয় এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টরা নির্বাচনের আগে ও পরে যেভাবে তাদের ইহুদিপ্রেম প্রকাশ করে থাকেন তাতে করে মনে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সহায়তা করছে না বরং ইসরাইলের দয়ায় টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকাশ্যভাবে এর দু’টি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। একটি মিডিয়া, অপরটি সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়া ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। আর আছে অর্থ। বিশ্বের অর্থসম্পদের একটি বড় অংশের মালিক ইহুদিরা। এ দু’টি এবং এগুলো নিয়ে গঠিত ইহুদি লবির সহায়তা না পেলে যুক্তরাষ্ট্রে কারো পক্ষে প্রেসিডেন্ট কিংবা কংগ্রেস সদস্য হওয়া কিংবা টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে প্রায় সবাই স্বীকার করেন। তবে শুধু অর্থ বা মিডিয়ার কারণে নয়, এগুলোর নেপথ্যে থাকা ধর্মবিশ্বাসই বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সম্ভবত ইহুদিরা ওই ধর্মবিশ্বাসই কৌশলে ব্যবহার করে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে গঠিত হয়েছে এর সংস্কৃতি, ধর্ম, সংবিধান সব কিছুই ইহুদিদের প্রতি দেশটির একটি বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে।সাধারণভাবে মনে করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।দেশটিতে সরকারিভাবে কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না।আমেরিকান সংবিধান সেকুলার, এতে সতর্কতার সাথে খ্রিষ্টধর্মের কথা উল্লেখ করা হয়নি এবং রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখা হয়েছে।তবে এটা কাগজে-কলমের কথা।বরং দেশটির প্রতিষ্ঠাতারা যে গ্রেট সিল তৈরি করেছিলেন তাতে খ্রিষ্টধর্মকে কেন্দ্র করেই জাতি গঠনের কথা বলা হয়েছিল।এতে দেখা যায়, মেঘ ও আগুনকে অনুসরণ করে ইসরাইল-সন্তানেরা প্রতিশ্র“ত-ভূমি তথা জেরুসালেমের দিকে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপিয়ান শ্বেতাঙ্গদের ঔপনিবেশ গড়ার বিষয়টিও লক্ষ করা জরুরি। আমেরিকায় নতুন ঔপনিবেশ খোঁজার জন্য হাজার হাজার পিউরিটান প্রথম চার্লসের চার্চ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা বাইবেলে বর্ণিত জেরুসালেমের কাহিনীতে বিশ্বাস করতেন। তাদের অনেকে মনে করতেন, যে আমেরিকাই বাইবেলে বর্ণিত জেরুসালেম কিংবা ইসরাইল। ধর্মীয় স্বাধীনতার সন্ধানে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার সময়ে তারা বাইবেলগুলোতে জেরুসালেম ও ইসরাইলি-সংক্রান্ত বক্তব্যগুলো পাঠ করছিলেন এবং নিজেদের কেনানের জনশূন্য প্রান্তরে একটি নতুন জায়ন নির্মাণে ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট মনোনীত লোক মনে করতেন। মে ফ্লাওয়ার থেকে অবতরণের সময়ে উইলিয়াম বেডফোর্ড প্রার্থনা করেছিলেন, ‘আসুন আমরা জায়নে ঈশ্বরের কথা ঘোষণা করি’। ম্যাসাচুসেটস বে কলোনির প্রথম গভর্নর জন উইনথ্রপ বিশ্বাস করতেন, ‘ইসরাইলের ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আছে’ এবং জেরেমিয়াহ ও ম্যাথুর আলোকে তার আবাসস্থলকে ‘পাহাড়ের ওপর নগরী’ (অর্থাৎ আমেরিকাই হলো নতুন জেরুসালেম) হিসেবে অভিহিত করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ১৮টি জর্দান, ১২টি কেনান, ৩৫টি বেথাল, ৬৬টি জেরুসালেম বা সালেম আত্মপ্রকাশ করে। অবশ্য সময়ের পরিক্রমায় বাইবেলের সাথে সম্পর্কিত এসব স্থানের প্রতি আবেগ টিকে থাকেনি। অল্প সময় পরে তারা আসল জেরুসালেম, আসল জর্দান, আসল কেনানের দিকে দৃষ্টি ফেরায় এবং এর সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে ইহুদিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিষ্টানদের একটি বড় অংশই মনে করে যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমনের (সেকেন্ড কামিং) পরে কেয়ামত হবে। তবে যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমন নিশ্চিত করতে হলে ইহুদিদের সেখানে জড়ো করতে হবে। যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমনের অল্প আগে এসব ইহুদি হয় নিহত হবে, কিংবা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা নেবে।
আর ইহুদিদের জেরুসালেমে পাঠানোর কাজ আমেরিকানেরা জোরালভাবে করে যাচ্ছে সেই ১৯ শতক থেকে। এমনকি ১৮৪৪ সালে ওয়ার্ডার ক্রেসন নামে একজনকে জেরুসালেমের মার্কিন কনস্যাল জেনারেল করে পাঠানো হয়েছিল। ১৮৪৭ সালে সেকেন্ড কামিং (দ্বিতীয় আগমন) হবে এ ব্যাপারে তার নিশ্চিত বিশ্বাসই ওই পদে তার নিয়োগের একমাত্র যোগ্যতা ছিল। তিনি খোলামেলাভাবেই তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতেন। জেরুসালেমে তুর্কি সরকারের প্রতিনিধি পাশার সাথে সাক্ষাৎকালে ক্রেশন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তিনি আসন্ন মহা প্রলয় (অ্যাপোক্যালিপস) এবং ইহুদিদের প্রত্যাবর্তনের জন্য এসেছেন। এই কাজ তাদের অনেকে এখনো করে যাচ্ছেন।
১৯ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি প্রবল অনুরাগের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই নিজেদের প্রফেট দাবি করতেন। বড় বড় শহর তো ছিলই এমনকি ছোট, পশ্চাদপদ খনি শহরের কাঠের চার্চ, সীমাহীন রুক্ষভূমিতে প্রতিষ্ঠিত গোলাবাড়ি, বাড়ন্ত নতুন নতুন শিল্পনগরীতে আমেরিকার নতুন প্রতিশ্র“ত ভূমির ধর্মপ্রচারকেরা প্রাচীন রূপকবর্জিত বাইবেলিক প্রত্যাদেশের উদ্ধৃতি দিতেন। ইভানজেলিক বিশেষজ্ঞ এবং জেরুসালেমের বাইবেলিক প্রতœতত্ত্ব প্রতিষ্ঠাতা ড. এডওয়ার্ড রবিনসন বলেন, ‘অন্য কোনো দেশে ধর্মগ্রন্থগুলো এত বেশি পরিচিত ছিল না।’ প্রথম দিকের আমেরিকান মিশনারিরা বিশ্বাস করতেন যে নেটিভ আমেরিকানেরা (রেড ইন্ডিয়ান) হলেন ইসরাইলের হারানো গোত্র (লস্ট ট্রাইব); প্রতিটি খ্রিষ্টানকে অবশ্যই জেরুসালেমে সত্যনিষ্ঠ কাজ, ইহুদিদের প্রত্যাবর্তন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে হবে। দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস লিখেছেন ‘আমি আন্তরিকভাবে চাই যে ইহুদিরা আবার স্বাধীন জাতি হিসেবে জুদাইয়ে যাক।’
এমনকি উইলিয়াম মিলার নামের এক আমেরিকান দৈব-বার্তা ঘোষণাকারী (প্রফেট) ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন। ম্যাসাচুসেটসের এই সাবেক সেনাকর্মকর্তা হিসাব করে দেখান যে ১৮৪৩ সালে জেরুসালেমে যিশুখ্রিষ্ট আবার আসবেন। তার প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে এক লাখ আমেরিকান তার মিলেরাইটস সম্প্রদায়ে যোগ দিয়েছিলেন। ড্যানিয়েল ৮.১৪-এ উল্লিখিত ‘পুণ্যস্থানটি দুই হাজার তিন শ’ দিনের মধ্যে পবিত্র হবে’-এর নতুন ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখানে উল্লিখিত দিনের অর্থ বোঝাচ্ছে বছর, দৈব-বার্তার দিন বলতে বছর বোঝানো হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫৭ সাল (যে বছরে পারস্যরাজ প্রথম আরতাজারেজসের টেম্পল নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন) থেকে হিসাব শুরু করে মিলার পৌঁছালেন ১৮৪৩ সালে। তবে ওই বছরে কিছু না ঘটলে তিনি ১৮৪৪ সালের কথা বললেন। উল্লেখ্য, মিলেরাইটের উত্তরসূরি চার্চ সেভেন্থ ডে অ্যাডভেটিস্টরা এবং জেহোভাস উইটনেসেস ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা এখনো বিশ্বব্যাপী ১৪ মিলিয়ন।
এই বিশ্বাসের কারণেই ২০ শতকে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কিংবা ২১ শতকে ইহুদি রাষ্ট্রটির শক্তিশালী অবস্থানে থাকার প্রতি আমেরিকার শর্তহীনভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন আমেরিকা ও ইসরাইলের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে উভয় দেশই ঐশ্বরিক আশীর্বাদপুষ্ট স্বাধীনতার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত একটি নতুন জায়ন, ‘পাহাড়ের ওপর নগরী’ এবং অপরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত পুরনো জায়ন। আমেরিকান ইহুদিরা আগেই আগ্রহী সমর্থক হয়ে পড়েছিল, তবে এখন আমেরিকান ইভানজেলিস্টেরা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে ইসরাইল হলো ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় যে আমেরিকানদের ৪০ শতাংশের বেশি জেরুসালেমে দ্বিতীয় আবির্ভাবে (সেকেন্ড কামিং) বিশ্বাস করেন। এটা যত অতিরঞ্জিতই হোক না কেন, আমেরিকান খ্রিষ্টান জায়নবাদীরা ইহুদি জেরুসালেমের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদান করেছেন এবং ইসরাইল এতে সন্তুষ্ট, যদিও তাদের কেয়ামতের দিনের দৃশ্যপটে ইহুদিদের ভূমিকা মর্মান্তিক।প্রতিদিন আমেরিকান করদাতারা দিচ্ছেন ৮০ লাখ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কী কারণে ইজরায়েলকে অন্য সব দেশের চেয়ে আলাদা নজরে দেখে?
ইজরায়েলের সৃষ্টি হয় ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান তখন প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সুসম্পর্ক ছিল, তেমন নয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৫৬ সালে মিশর আক্রমণের সময়।
সেই হামলায় ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সাথে ইজরায়েলও অংশ নেয়। ইজরায়েল মিশরের সিনাই উপদ্বীপ ও গাজার একটি অংশ দখল করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া আর্থিক সহায়তা বাতিল করার হুমকি দেয়। এরপর দীর্ঘদিন ইজরায়েলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গোপন পারমাণবিক প্রকল্পের কথাই বলা যেতে পারে উদাহরণ হিসেবে। ইজরায়েলের এই প্রকল্প বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। কারণ তখন ইজরায়েলের নিরাপত্তার চেয়ে তাদের কাছে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্ব বেশি ছিল।
কিন্তু ১৯৬৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা ইজরায়েলের পক্ষ নেয়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি রচনা করে।
তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কূটনীতিকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব কমাতে ইজরায়েল তাদের কার্যকরী এক অস্ত্র হতে পারে। সত্যিকার অর্থে তখন আরব দেশগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক প্রভাব ছিল। সেই প্রভাব কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের সাথে কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই যুদ্ধে মার্কিনরা বেশ সফলতাও অর্জন করে এবং নিজেদের বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই আবার যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়নি। বরং নিজেদের প্রয়োজনে সম্পর্কের আরো উন্নয়ন করেছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিরোধ ও সমস্যা ‘সমাধানে’ উদ্যোগী হয়। এর বড় কারণ ছিল তেলের বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর সেজন্য তখন দরকার ছিল মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা। যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ‘জামিনদার’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে!
সেসময় সৌদি আরব, মিশর ও ইজরায়েলের মতো দেশগুলো আমেরিকার সাহায্য গ্রহণে সম্মত হয়। কারণ এর মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আলাদাভাবে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে। কিন্তু ইরান, সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হাত মেলায়নি। এই দেশগুলো আগের মতোই নিজেদের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
তখন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এমন একটি মিত্র দরকার, যারা তাদের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্বের একটি বিষয় ছিল। সেই সমস্যা নিরসনে শক্ত ঘাঁটি বিনির্মাণের জন্যই তারা বেছে নেয় ইজরায়েলকে।
যুক্তরাষ্ট্র তখন ইজরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের হয়ে ফিলিস্তিনের সাথে দেনদরবার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণেই এখনো ইজরায়েল যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। বিগত তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টই চেষ্টা করেছেন ফিলিস্তিনের সাথে ইজরায়েলের একটি সুরাহা করার। তবে এক্ষেত্রে তাদের সমর্থনের পাল্লা তেল আবিবের দিকেই বেশি থেকেছে।
ইজরায়েলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির পরও অনেক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। তবে কখনো তা চরম বৈরিতা সৃষ্টি করেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইজরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইজরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সফলতার প্রথম শর্ত ইজরায়েলকে সমর্থন
যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র তাদের পররাষ্ট্র নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলের জন্য ইজরায়েলকে সমর্থন করে না। এর চেয়ে বড় প্রভাবক হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। আশির দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইজরায়েল বড় এক ইস্যু। কারণ অধিকাংশ আমেরিকান ইজরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যারা ইজরায়েলকে সমর্থন করে, তাদেরকে ভালো চোখে দেখা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব ইস্যুর মধ্যে ইজরায়েলের পাল্লা ভারী। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্কিন নাগরিকদের প্রায় ৭০ ভাগই ইজরায়েলকে সমর্থন করেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে ইচ্ছুক। বিপরীতে মার্কিন মুলুকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দিনকে দিন আরো কমছে।
ইজরায়েলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির পরও অনেক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। তবে কখনো তা চরম বৈরিতা সৃষ্টি করেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইজরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইজরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সফলতার প্রথম শর্ত ইজরায়েলকে সমর্থন
যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র তাদের পররাষ্ট্র নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলের জন্য ইজরায়েলকে সমর্থন করে না। এর চেয়ে বড় প্রভাবক হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। আশির দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইজরায়েল বড় এক ইস্যু। কারণ অধিকাংশ আমেরিকান ইজরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যারা ইজরায়েলকে সমর্থন করে, তাদেরকে ভালো চোখে দেখা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব ইস্যুর মধ্যে ইজরায়েলের পাল্লা ভারী। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মার্কিন নাগরিকদের প্রায় ৭০ ভাগই ইজরায়েলকে সমর্থন করেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে ইচ্ছুক। বিপরীতে মার্কিন মুলুকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দিনকে দিন আরো কমছে।
মার্কিন জরিপকারী সংস্থা ‘গ্যালাপ’ ১৯৮৮ সাল থেকে মার্কিন নাগরিকদের ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতি মার্কিনিদের সমর্থনের তুলনামূলক তথ্য সংগ্রহ করছে। আশির দশকের শেষভাগে ফিলিস্তিনিদের প্রতি মাত্র ১৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই হার কমতে কমতে সর্বশেষ ১২ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে ইজরায়েলের ইহুদিদের প্রতি সমর্থন আগের চেয়েও বেড়েছে। যে কারণে মার্কিন রাজনীতিবিদদের বড় একটি অংশ কট্টরভাবে ইজরায়েলকে সমর্থন করেন।
কিন্তু মার্কিন নাগরিকরা কেন ইজরায়েলকে এত বেশি সমর্থন করে? এর বড় এক কারণ মার্কিন নাগরিকদের শেয়ার ভ্যালুর চেতনা। এছাড়া তাদের কাছে ইজরায়েলের একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেটি হলো, ইজরায়েলে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা একে তাদের ও ইজরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে একইসাথে তারা মনে করেন, ইজরায়েল যদি শেয়ার ভ্যালু ও গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তারা এই সমর্থন প্রত্যাহার করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠনগুলো অধিক সক্রিয় ও শক্তিশালী। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে উভয় ধর্মেরই নির্বাচিত সদস্য রয়েছে, যাদের সবাই ইজরায়েল পন্থী। যার ফলে কংগ্রেসে ইজরায়েলের পক্ষে কোনো বিল পাস করা বেশ সহজ।
তবে আমেরিকান খ্রিস্টান ও ইহুদিদের মধ্যে ইজরায়েলকে সমর্থন করা নিয়ে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। আমেরিকান খ্রিস্টানদের অধিকাংশ যেখানে পূর্ণভাবে ইজরায়েলকে সমর্থন করেন, সেখানে ইহুদিদের মধ্যেই কিছু মতবিরোধ রয়েছে। যেমন- আমেরিকার প্রগতিশীল ইহুদিদের ৬৫ শতাংশ পশ্চিম তীরে ইজরায়েলের নতুন করে বসতি স্থাপনের বিপক্ষে। কিন্তু খ্রিস্টানরা এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন।
আবার যে সকল ইহুদিদের বয়স ৩৫ বছরের কম, তারা নিজেদের ইহুদিবাদীই মনে করেন না। আর বয়স্ক ও রক্ষণশীল ইহুদিদের মতামতের মধ্যে দিয়ে আপামর ইহুদিদের মনোভাবও প্রকাশ পায় না। কারণ এদের অনেকেই আমেরিকান জাতীয়তাবাদকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
তবে রক্ষণশীল ইহুদিরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভোট ইজরায়েলের বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করেই হোক। এই রক্ষণশীলদের বড় অংশই ফ্লোরিডা ও পেনসিলভেনিয়াতে বাস করেন। এই দুটি অঞ্চল আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো নির্বাচনী আসনে যুক্তরাষ্ট্র-ইজরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব জানতে একটি জরিপ করেছে পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাদের তথ্য বলছে, ৫৪ শতাংশ আমেরিকান ইহুদি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইজরায়েলকে পর্যাপ্ত সাহায্য করেছে। আর ৩১ শতাংশ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে, তা এখনো যথেষ্ট নয়! অপরদিকে ৩১ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইজরায়েলের জন্য সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করেছে। আর ৪৬ শতাংশ মনে করেন আরো সাহায্য করা উচিত।
সবশেষে বোঝা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান, ইহুদি ও উদারচিন্তার নাগরিকদের সম্মিলিত সমর্থন পাচ্ছে ইজরায়েল, যা তাদের মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
আইপ্যাকের শক্তিশালী লবিং
যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে আমেরিকান ইজরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)-এর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এরপর তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের উপর বড় প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু তারা এই কাজ করে কীভাবে?
আইপ্যাক মূলত তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তারা সরাসরি কোনো দলকে অর্থ দেয় না। বরং পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচনে অর্থব্যয় করে। বিশেষত রিপাবলিকান প্রার্থীদের তারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। আর এই কাজটি তারা আশির দশক থেকেই করে আসছে।
‘কংগ্রেশনাল ক্লাব’ নামে আইপ্যাকের বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইজরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে।
তবে আইপ্যাক সামগ্রিকভাবে কত অর্থ ব্যয় করে, সেই সম্পর্কে জানা যায় না। তবে তাদের এমন কিছু সদস্য আছে, যারা এক মিলিয়ন থেকে শত মিলিয়ন পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আর এই সকল দাতাদের ধ্যান-ধারণা সবই ইজরায়েলকে ঘিরে। তারা যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলকে টিকিয়ে রাখতে চান।
আইপ্যাক শুধু নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করে না। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কংগ্রেস সদস্যকে তারা ইজরায়েল সফরে নিয়ে যান। যখন এসব সদস্য ইজরায়েল সফর করেন, তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে দেশটির জন্য আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আদতে তাদের সফরকে সাজানোই হয় তেমনভাবে!
যুক্তরাষ্ট্রে আইপ্যাকের মতো আরো কিছু ইজরায়েলপন্থী লবি রয়েছে। এদের অনেক সংগঠনই আইপ্যাকের চেয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করে। তবে অন্য সব সংগঠনের চেয়ে আইপ্যাকের সাফল্য অনেক বেশি।
শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই আইপ্যাক অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব সৃষ্টির জন্য ইজরায়েল যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে এরপরও দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখান থেকে লাভবান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৮৫ সালে ইজরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইজরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দুই দেশ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা থেকে সিংহভাগ লাভবান হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইজরায়েল।
ইজরায়েলে আইটি থেকে শুরু করে জ্বালানি, ঔষধ, খাবার, প্রতিরক্ষা এবং সেবা রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইজরায়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ইহুদিপ্রধান দেশটির সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে, যা থেকে সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বলা হয়ে থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইজরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে তার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছে। এর প্রতিদান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রও কম দিচ্ছে না!
ইজরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কখনো পরিবর্তন হবে কি?
এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া খু্বই কঠিন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে ইজরায়েলের অবস্থান ভবিষ্যতে কোথায় দাঁড়াবে- তা বলা খু্বই মুশকিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইজরায়েলপন্থীদের যে প্রভাব- তা খুব শীঘ্রই হ্রাস পাবে না। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের মিত্রতা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।
তবে ইজরায়েল যদি পশ্চিম তীরে তাদের বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখে, তা হয়তো ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব রাখতে পারে। এর আগে বারাক ওবামা সাময়িকভাবে ইজরায়েলের পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপন সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিলেন। তখন ইজরায়েল তাদের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস সদস্যদের মাধ্যমে ওবামার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
তবে মূল বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রধান দুটি দলই ইজরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসছে। যে কারণে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে একেবারে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কখনোই মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ হারাতে চায় না। সেই নিয়ন্ত্রণ যদি তারা ধরে রাখতে চায়, তাহলে কৌশলগতভাবে ইজরায়েলকে তাদের প্রয়োজন।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল থেকে বিতাড়িত মুসলিম ও খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনিদের বংশধরদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া হয় না। অথচ কোনো ইহুদি বিশ্বের যেকোনো অংশে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে চাহিবামাত্র ইসরাইলের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। আরেকটি খবর বিশ্বের খুব কম লোকই জানেন, তা হলো ইসরাইলের মোট ভূমির ৯০ শতাংশ কঠোর বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত। এখানে অ-ইহুদিদের কোনো অধিকার নেই, এমনকি তারা ইসরাইলের নাগরিক হলেও নয়। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, এই ভূমির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, কমছে না। এর ফলে নাগরিকত্ব, বেসামরিক ও মানবাধিকারের দিক থেকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একই ধরনের দেশ হিসেবে অভিহিত করাটা কোনোমতেই যৌক্তিক নয়।
সূএ:ইন্টার নেট