

ইরানের সঙ্গে সংঘাতের মাত্র ৬ দিনের মাথায় অস্ত্র সংকটে ভুগছে ইসরায়েল। বুধবার (১৮ জুন) প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ শেষের পথে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসে শুক্রবার ( ১৩ জুন) আকস্মিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে, ইসরায়েলে ৩৭০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ঠেকাতে ইসরায়েলের ব্যাপকভাবে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, এতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র মজুদে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই ঘাটতি ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় দেশটির ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস আগে থেকেই ইসরায়েলের ‘অ্যারো’ ইন্টারসেপ্টরের ঘাটতির কথা জানে এবং সেই অনুযায়ী ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে আসছে। কিন্তু সেই মজুদও সীমিত। ইসরায়েলে অনেক অস্ত্র পাঠানোর পর, এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইন্টারসেপ্টর ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তার বরাতে আকেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের হামলার বর্তমান গতি বজায় থাকলে ইসরায়েল আর মাত্র ১০-১২ দিন তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে বা যুদ্ধে জড়িত হতে হবে।
সূত্রটি আরও বলেছে, এই সপ্তাহের শেষের দিকে, ইসরায়েলকে ‘তারা কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে চায় তা নির্বাচন করতে হবে এবং যেগুলো খোলা জায়গায় পড়বে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। যদিও ইসরায়েল ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে বড় ধরণের হামলার মুখোমুখি হলে জনবহুল এলাকা বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর দিকে পরিচালিত সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত কিন্তু যুদ্ধাস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না।
আইডিএফ বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলে ছোড়া বেশিরভাগ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ইরানের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে ‘অ্যারো’ সিস্টেমই একমাত্র প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্থল-ভিত্তিক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এয়ার ডিফেন্স (টাদ) ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েল বহু বছর ধরে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-এর ওপর নির্ভরশীল।