অব্যবস্থাপনা ও দখলে ধ্বংস হচ্ছে ঢাকার উন্মুক্ত স্থান

ঢাকা শহরের খেলার মাঠ, পার্ক ও অন্যান্য উন্মুক্ত স্থান ক্রমশ কমে যাচ্ছে। দখল, বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং অব্যবস্থাপনার কারণে তরুণরা সুস্থ বিনোদন, শারীরিক বিকাশ এবং সামাজিক মেলবন্ধনের সুযোগ হারাচ্ছে। এই সংকট নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান আর গণপরিসর: তারুণ্যের অধিকার না দায়?’ শীর্ষক সংলাপ আয়োজন করে।

গ্রীন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, গ্রীন ভয়েস-এর উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া, সহ-সমন্বয়ক আরিফুর রহমান ও ফাহমিদা নাজনীন, আহসান হাবিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের পরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী জহির রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী ইকরা আক্তার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাপসী রাবেয়া হল সংসদের বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী সায়মা হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মন্নুজান হল সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী, গ্রীন ভয়েস ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি আসাদুল ইসলাম, ইডেন কলেজ শাখার সংগঠক নুসরাত ইমরোজ তিষা, তেজগাঁও কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কবির হৃদয়, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার সংগঠক মাহমুদুল হাসান তাসিন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখার সংগঠক আসফিয়া তাসনিম, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার প্রচার সম্পাদক শান্ত মৃধা রোহিত, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ শাখার যুগ্ন আহ্বায়ক রিহাব হোসেন, সরকারি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ শাখার আহবায়ক জুয়েল রানা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সংগঠক রাতুল হাসানসহ গ্রীন ভয়েস-এর কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিবৃন্দ।

সংলাপে নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। ১৯৯৫ সালে যেখানে সবুজ এলাকা ছিল ৫২.৪৮ বর্গকিমি, ২০২৩ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ২৯.৮৫ বর্গকিমি। বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি ১,০০০ জনের জন্য উন্মুক্ত জায়গা মাত্র ০.০২ একর, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। অনেক খেলার মাঠ ও উদ্যান দখল, বাণিজ্যিক ব্যবহার বা তালাবদ্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণ, নতুন সবুজ পরিসর গড়ে তোলা, দখলমুক্তকরণ এবং নগর বনায়ন কার্যক্রম জরুরি।

অব্যবস্থাপনা ও দখলে ধ্বংস হচ্ছে ঢাকার উন্মুক্ত স্থান
অব্যবস্থাপনা ও দখলে ধ্বংস হচ্ছে ঢাকার উন্মুক্ত স্থান

সিনিয়র সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া বলেন, গণপরিসর রক্ষা শুধু তরুণদের দাবি নয়, এটি সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্নও বটে। খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান টিকিয়ে রাখতে তরুণদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এলে জনচাপ সৃষ্টি হবে, যা এসব জায়গাকে দখল ও অব্যবস্থাপনা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।

সংলাপে উপস্থিত তরুণ প্রতিনিধিরা জানান, মাঠ ও পার্ক শুধুমাত্র খেলাধুলার ক্ষেত্র নয়, এটি তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশ, দক্ষতা অর্জন এবং নারীর নিরাপদ বিনোদনের জন্যও অপরিহার্য। তারা নগরের সবুজ এলাকা সংরক্ষণ, দখলমুক্তকরণ এবং গণপরিসর সম্প্রসারণসহ দশ দফা দাবিসহ সরকারের কাছে পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

গ্রীন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ঢাকাশহর দিনে দিনে কংক্রিটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যান ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। ওসমানী উদ্যান দীর্ঘ ১০–১২ বছর ধরে তথাকথিত উন্নয়নের বেড়াজালে বন্দি রয়েছে। শহরের মানুষের সুস্থভাবে শ্বাস নেওয়ার প্রতিটি উৎস আজ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এর ফলে একদিকে শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। বিনোদন ও অবসরের সুযোগ না থাকায় অনেক তরুণ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

কর্মসূচি থেকে গ্রীন ভয়েস ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে: নগরের সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে সবুজ এলাকা, পার্ক ও খেলার মাঠ নিশ্চিত করা; বিদ্যমান মাঠ সংরক্ষণ ও সংখ্যা বৃদ্ধি; নগরের অভ্যন্তরের অব্যবহৃত জায়গা সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা; ড্যাপ ২০২২–৩৫ অনুযায়ী আঞ্চলিক পার্ক, জলকেন্দ্রিক পার্ক ও ইকোপার্ক বাস্তবায়ন; নাগরিক সুবিধাসহ গণপরিসর সম্প্রসারণ; পথভ্রষ্ট উন্নয়নের নামে বৃক্ষনিধন বন্ধ; সবুজ ভবন ও ছাদবাগান পদ্ধতি প্রসারে প্রণোদনা প্রদান; ভূমি সংক্রান্ত স্বচ্ছতা ও অনলাইন প্রকাশ নিশ্চিত করা; পাবলিক ক্লাবে রূপান্তরিত খেলার মাঠ ফিরিয়ে আনা; এবং নগর বন সৃষ্টি ও দেশজ বৃক্ষ রোপণ।

সংলাপে উপস্থিত গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় ও কলেজ ইউনিটের প্রতিনিধিরা বলেন, তরুণদের সুস্থ জীবন, বিকাশ এবং সামাজিক মেলবন্ধনের জন্য উন্মুক্ত স্থান রক্ষা এখন সময়ের চাপে অপরিহার্য।